নিজস্ব প্রতিনিধি: পেট্রোল-ডিজেলের দাম যেমন চড়চড় করে বাড়ছে বিশ্বের বাজারে তেমনি তা থেকে দূষণের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। যার নিট ফল বিশ্বউষ্ণায়ণ। কার্যত এই বিশ্ব উষ্ণায়ণের জেরে সমগ্র বিশ্বই বড় বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে। সেই বিপদ থেকে যাকে বিশ্ববাসীকে বাঁচানো যায় তার জন্য পরিবেশবিদ থেকে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বার বার বার্তা দিচ্ছেন কার্বন নিঃসরণ কমাতে। আর সেই সূত্রেই তাঁরা জোর দিতে বলছেন বিকল্প শক্তির ওপরে। ভারত সরকারও সেই বিকল্প শক্তিতে জোর দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) ন্যাশনাল হাইড্রোজেন মিশন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বুঝিয়েছেন আগামী দিনে হাইড্রোজেন শক্তিতেই গাড়ির চাকা ঘুরবে ভারতে। কার্যত ঘোরাতে হবে। কেননা এছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই বিদ্যুৎ ছাড়া। আর সেই সূত্রেই নরেন্দ্র মোদির সরকার বিকল্প শক্তির মাধ্যমে গাড়ি বা নানান যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য গবেষণার ক্ষেত্রে ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে। আর এই ধরনের গবেষণাতেই এবার ভারতের তথা মোদির মুখ উজ্জ্বল করলেন বাংলার(Bengal) এক যুবক। নাম তাঁর শেখ রিয়াজউদ্দিন(Sheikh Riyajuddin)।
ঠিক কী হয়েছে? বাংলার বুকে পূর্ব বর্ধমান(Purba Burdhwan) জেলার কাটোয়া(Katwa)-১ ব্লকের করজগ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁধমুড়ো গ্রামের চাষি শেখ বাগবুল ইসলামের ছেলে শেখ রিয়াজউদ্দিনের গবেষণা সাড়া ফেলে দিয়েছে গোতা বিশ্বে। তাঁর গবেষণাপত্র ঠাঁই পেয়েছে ‘আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির ন্যানো জার্নালে’। আসলে জল থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদন করে গাড়ি চালানোর পদ্ধতির আবিষ্কার করে ফেলেছেন রিয়াজউদ্দিন। আর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য রিয়াজউদ্দিন ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছেন পাঞ্জাবের মোহালির ইন্সটিটিউট অব ন্যানো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বেস্ট থিসিস অ্যাওয়ার্ডের গোল্ড মেডেল। এখানেই থেমে নেই তাঁর সাফল্য। বস্তুত এবার ভারতের বাইরে আমেরিকা ও সৌদি আরব থেকেও গবেষণার জন্য ডাক পাচ্ছেন এই তরুণ গবেষক। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি ও সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে পোস্ট ডক্টরেট করার জন্য। কেননা শেখ রিয়াজউদ্দিনের গবেষণার মূল বিষয় জলকে ভেঙে হাইড্রোজেন উৎপাদন করে সেই শক্তির মাধ্যমে মোটর চালানো।
কিন্তু যাকে ঘিরে এই সাফল্য সেই রিয়াজউদ্দিন কী বলছেন বা ভাবছেন? তিনি কী এবার এই বাংলা, এই ভারত ছেড়ে বিদেশে চলে যাবেন? ব্রেন ড্রেম এক্ষেত্রেও কী ধাক্কা দেবে বাংলা তথা ভারতকে। রিয়াজউদ্দিন জানিয়েছেন, ‘জলকে ভাঙলে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন উৎপাদন হয়। এই হাইড্রোজেনকে কাজে লাগিয়ে ‘হাইড্রোজেন ফুয়েল কার’ এখন বিদেশে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। কিন্তু জলকে ভাঙার কাজে যে ধরনের অনুঘটক ব্যবহার করতে হয় তা অত্যন্ত দামি মৌল। ওই ধরনের দামি মৌল ব্যবহার করলে আখেরে লাভ কিছু নেই। কিন্তু টিন, নিকেল, কপার ইত্যাদির মতো সহজলভ্য ধাতু অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করেও জলকে ভেঙে হাইড্রোজেন উৎপাদন করা সম্ভব। জল থেকে উৎপাদিত ওই হাইড্রোজেন দিয়েই ‘হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল’ অনায়াসে তৈরি করা যায়। তা অত্যন্ত কম খরচে সম্ভব। হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল কারে যে ব্যাটারি থাকবে, সেটি সৌরশক্তিতে চার্জ হবে। বিদ্যুৎ শক্তির খরচও তাতে সাশ্রয় হবে। বিদেশে এই ধরনের গবেষণার খরচ নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। তবে এদেশেও এখন সরকারি স্তরে সাহায্য করা হয়। দেখা যাক কী হয়। এখনও কিছু ঠিক করে উঠিনি।’
জানা গিয়েছে, রিয়াজউদ্দিন ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনার পর পঞ্চাননতলা উচ্চবিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েন। তারপর বর্ধমান আল আমিন মিশন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর হন। এরপর তিনি সর্বভারতীয় নেট ও গেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পাঞ্জাবের মোহালি ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে তিনি পিএইচডি করছেন। ন্যানো সায়েন্সের উপর সাড়ে পাঁচবছর ধরে তিনি গবেষণা করছেন। বর্তমানে স্ত্রী ওয়াহিদা খাতুনকে নিয়ে তিনি পাঞ্জাবেই রয়েছেন। তবে তাঁর সাফল্যের কথা সোশ্যাল মিডিয়া মারফত ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। আর সেই সাফল্যের রেশ পড়ছে বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামেও।