নিজস্ব প্রতিনিধি: কালিপুজোর রাতে কার্যত চমকে গিয়েছিলেন দক্ষিণবঙ্গের একটা বড় অংশের মানুষ। কথা ছিল ঘূর্ণিঝড়(Cyclone) সিত্রাংয়ের জেরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির মুখে পড়বে দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলি জেলা। বইবে ঘন্টায় ৯০কিমি বেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়াও। কিন্তু তা হয়নি। সেভাবে বৃষ্টিও হয়নি, দমকা হাওয়াও রাত ১০টার আশেপাশে গিয়ে থমকে গিয়েছিল। আর রাত ১২টার পর থেকেই শুরু হয় ঠাণ্ডার শিরশিরানি। রাতের আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে তারা ফুটে ওঠে। আর হুট করে ঘটে পারা পতন। কিছু কিছু এলাকায় মানুষ কেঁপেছেন হু হু করে। আর সেই রেশটা কিন্তু দিনভর রয়ে গিয়েছিল মঙ্গলবারও। বুধ সকালের ছবিটাও এক। আর তার জেরেই আমজনতার প্রশ্ন, শীত(Winter) কী এসে গেল? যদিও আলিপুর আবহাওয়া দফতরের দাবি, এই আবহাওয়া কার্যত সিত্রাংয়ের(Sitrang) সাইড এফেক্ট। শীত এখনও বহু দূরে। শিরশিরানি ভাব বা ঠাণ্ডা লাগা সাময়িক একটা ছবি মাত্র। খুব শীঘ্রই আবার গলদঘর্ম অবস্থা ফিরছে বাংলায়।
আরও পড়ুন Cyclone Sitrang: বাংলাদেশে সিত্রাং কেড়েছে ২২ প্রাণ, ৮০ লক্ষ বাড়ি বিদ্যুৎহীন
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের জেরে চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছিল এপার বাংলার ৫টি মহকুমা এলাকায়। যদিও সিত্রাং এপার বাংলার(West Bengal) পথে আসেনি। বরঞ্চ তা গিয়েছে ওপার বাংলার পথে। সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে কার্যত লন্ডভন্ড দশা বাংলাদেশের(Bangladesh) একটা বড় অংশ। সেখানে সরকারি হিসাবে এখনও পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবথেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে। সিত্রাংয়ের ল্যান্ডফলের সময় হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর তা উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অভিমুখে বরাবর এগিয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কমপক্ষে ১০ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওপার বাংলায়। সেই সঙ্গে ৬ হাজার হেক্টরেরও বেশি চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাছের চাষ হয়, এমন বহু জলাজমিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের দাপটে হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। ভাসান চরে ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাদের রিফিউজি ক্যাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এপার বাংলায় সে সব কিছুই হয়নি। উল্টে হাজির ছদ্মশীত। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেশ কিছুটা কমেছে।
আরও পড়ুন সিত্রাংয়ের ঘা এখনও দগদগে, ডিসেম্বরে বাংলাদেশে আসতে পারে আরও এক ঘূর্ণিঝড়
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের দাবি, এই সাময়িক পারদ পতন শীতের ইঙ্গিত নয়। আপাতত বঙ্গে শীতের কোনও সম্ভাবনা নেই। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে শীত অনুভূত হবে না বঙ্গে। আগামী কয়েকদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কম থাকায় হালকা শিরশিরানি অনুভূত হবে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। এটা সম্পূর্ণই সাইক্লোন সিত্রাংয়ের আফটার এফেক্ট। কয়েকদিনের মধ্যেই আবার আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বিশেষ করে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপেক্ষিক আর্দ্রতার ফের বৃদ্ধি পাবে। গুমোট গলদঘর্ম ভাব ফিরে আসবে। বাংলায় পুরোপুরি শীত প্রবেশ করবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে। তার আগে সকাল বেলা কিংবা অফিস টাইমে শীত অনুভূত হবে না। যদিও নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভোরের দিকে কিছুটা হলেও শীতের আমেজ পাবেন কলকাতাবাসী। আগামী চার থেকে পাঁচদিন শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে কলকাতায়। তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামবে না। দিনের বেলা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকবে ৩১ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতের দিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকবে ২১ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোরবেলা আগামী কয়েকদিন শীতের আমেজ অনুভূত হলেও তা স্থায়ী হবে না। কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলা যেমন দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতেও ভোরের দিকে পারদ পতনের জেরে হালকা শীতের আমেজ রয়েছে। যদিও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাওয়ার পরিবর্তন হবে।