নিজস্ব প্রতিনিধি, শান্তিনিকেতন: সোনাঝুরি জঙ্গলের এই পুজো হীরালিনী দুর্গোৎসব নামে পরিচিত । অনেকে আবার সোনাঝুরির দুর্গাপুজোও বলে থাকেন ৷ ২৩ বছরের পুরোনো এই পুজোর আকর্ষণ আর পাঁচটা পুজোর থেকে অনেকাংশে ভিন্ন । সোনাঝুরি জঙ্গলে(Sonajhuri Forest) এই শৈল্পিক দুর্গা দেখতে প্রতি বছরই বহু মানুষ ভিড় জমান ৷ এবার টেরাকোটার দুর্গার আকর্ষণ রয়েছে ৷২০০১ সালে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গলে শৈল্পিক দুর্গাপুজোর সূচনা করেন প্রয়াত শিল্পী বাঁধন দাস । তাঁর অবর্তমানে এখন তাঁরই ছাত্র শিল্পী আশিস ঘোষের হাত ধরে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন এই পুজোর আয়োজন করে থাকেন । আর পাঁচটা পুজোর মতো এই পুজোয় নেই কোনও আদি রীতি-রেওয়াজ । নেই আকর্ষণীয় জাঁকজমক মণ্ডপ । হয় না প্রথা মেনে পুজো । এখানে শুধুই রয়েছে শিল্পের ছোঁয়া ।
আর তাই অন্যান্য পুজোর থেকে সোনাঝুরি জঙ্গলের এই হীরালিনী দুর্গাপুজোর (Hiralini Durga Pujo)আকর্ষণ মানুষজনের কাছে অনেক বেশি । পদ্মফুল সোনাঝুরির এই জঙ্গল লাগোয়া রয়েছে আদিবাসী অধ্যুষিত একাধিক গ্রাম ৷ বনেরপুকুর ডাঙা, ফুলডাঙা, বল্লভপুর ডাঙা ও সরকার ডাঙা নামে প্রভৃতি গ্রামের আদিবাসী মানুষজনই এই পুজোর সমস্ত আয়োজন করে থাকেন । এছাড়াও, প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন এই পুজোয় অংশ নেন ৷ যদিও বিগত ২বছর কোভিড পরিস্থিতির জন্য তারা আসতে পারেননি ৷ পুজোর চারদিন আদিবাসী নৃত্য ও স্থানীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়।
২০০১ সালে পুজো শুরু করার সময় দেবীর হাতে অস্ত্র ছিল ৷ এরপর ২০৯২ সালে আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিস্ফোরণ ও ইরাক যুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের নগ্ন রূপ বেরিয়ে আসে । তাই সেই বছর থেকে ‘বিশ্ব শান্তির’ বার্তা দিতে শিল্পী বাঁধন দাস দেবীর হাতে অস্ত্রের বদলে পদ্মফুল দেন । সে বছরই প্রয়াত হন তিনি । তারপর থেকে এই পুজোর হাল ধরেন তাঁরই ছাত্র শিল্পী আশিস ঘোষ।এখানে মা দুর্গা ও তাঁর সন্তানদের হাতে অস্ত্রের বদলে পদ্মফুলই শোভা পায় ৷ এ বছর টেরাকোটার প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছে । প্রতিমা থেকে শুরু সমস্ত নক্সাই টেরাকোটা দিয়ে তৈরি ।
শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির হীরালিনী দুর্গোৎসব পুজোর বিষয়ে শিল্পী আশিস ঘোষ বলেন, “আমার শিক্ষক শিল্পী বাঁধন দাস(Late Badhan Das) এই পুজোর সূচনা করেছিলেন । বর্তমানে আদিবাসী মানুষজনের সহযোগিতায় আমরা এই পুজো চালিয়ে আসছি । আর পাঁচটা পুজোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এই পুজো । তাই মানুষজন খুব উৎসাহের সঙ্গে এখানে আসেন । এবার কোডিভ মুক্ত, তাই মানুষের উৎসাহ আরও বেশি । আমরা শিল্পকেই গুরুত্ব দিই, যেহেতু আমি নিজেও একজন শিল্পী । পুজোর ৪ দিন আদিবাসী, সাঁওতাল জনজাতির উৎসব ও অনুষ্ঠান এখানে হয়ে থাকে।