নিজস্ব প্রতিনিধি: কোনও অবস্থাতেই যে রাজ্য সরকার দার্জিলিংয়ের(Darjeeling) পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনস্ট্রেশন(GTA) বা জিটিএ’র নির্বাচন থেকে পিছু হঠবে না সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন(State Election Commission)। বৃহস্পতিবার তাঁরা সাংবাদিক বৈঠক করে জিটিএ নির্বাচনের কথা জানিয়ে দিয়েছে আর এদিন অর্থাৎ শুক্রবার তাঁরা নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তিও জারি করে দিয়েছে। আর এই নির্বাচন ঠেকাতে পাহাড়ে যিনি অমরণ অনশনে বসেছেন সেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা(GJMM) সুপ্রিমো বিমল গুরুং(Bimal Gurung), যে পাহাড়ের জনতার ছিঁটেফোঁটা সমর্থন বা আবেগ পাচ্ছেন না তাও ক্রমশ দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনশনের তৃতীয় দিনেও দার্জিলিংয়ের সিংমারিতে মোর্চার দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনশন মঞ্চে কার্যত একাই অসুস্থ শরীরে বসে রয়েছেন গুরুং। অনশনের প্রথম দিনে যাও বা কিছু দলীয় কর্মীর দেখা মিলেছিল, এখন সেটাও উধাও। মাঝেমধ্যে দলের এক আধজন নেতা এসে দেখা করে যাচ্ছেন গুরুংয়ের সঙ্গে।
এই অবস্থায় দলের কার্যালয়ে বসে বৈঠকের পর বৈঠক করে চলেছেন রোশন গিরি। কেননা তিনি কেন, মোর্চার নীচু তলার কর্মীরাও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন, পাহাড়ে মোর্চার প্রতি ছিঁটেফোঁটা সমর্থন বা আবেগ আর অবশিষ্ট নেই। পাহাড়ে মোর্চা যে জমি হারিয়েছে, তা নিজের মুখেই এখন অহরহ স্বীকার করে নিচ্ছেন মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। সেই জমি কীভাবে আবার ফেরানো যায় তা নিয়েই চলছে বৈঠক। যদিও এক ইঞ্চিও জমি উদ্ধারের কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন পাহাড়ের আমজনতা। কেননা গুরুং পাহাড়কে যেভাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যত ও অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন তা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। কেননা দিনের পর দিনের বনধ পাহাড়ের অর্থনীতির কোমর ভেঙে দিয়েছিল। গুরুং এই বনধের রাজনীতিকে হাতিয়ার করে পাহাড়ের ক্ষমতা নিজের হাতে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বুঝতে চাননি পাহাড়ের আমজনতার মনের কথা। তাঁরা পৃথক রাজ্য চান না, চান না গোর্খাল্যান্ডও। চান খালি শান্তির জীবন। দুবেলা দুমুঠো পেট ভরা খাবার। চান সুস্থ স্বাভাবিক জীবন। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, চিকিৎসা, কাজ। এর কোনওটাই গুরুং দিতে পারেননি। তাই পাহাড়ও আজ গুরুংকে নিয়ে ভাবছে না। একই সঙ্গে পাহাড়ের জনতা আর নতুন করে কোনও অশান্তি চায় না। তাই গুরুংয়ের অনশন মঞ্চ এড়িয়েই চলছেন তাঁরা।
গুরুংয়ের এই জমিহারা দশা এখন বেশ উপভোগ করছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও। পাহাড়বাসীর ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে বিমল যে আবেগ টানতে চাইছিলেন, তা রাজ্য সরকারের কাছে শুরু থেকেই পরিষ্কার ছিল। শুধু তাই নয়, মানুষ যে তাতে সাড়া দেবে না, তা-ও সরকার জানত। তাই সরকারের তরফে টুঁ-শব্দটিও করা হয়নি বলেই জানাচ্ছেন শাসকদলের নেতারা। রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘মোর্চা যে আমাদের বিরুদ্ধে, এ নিয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই। আমরা এ-ও জানি, পাহাড়ে জমি হারিয়েছে মোর্চা। তাই আমরা চুপ করে ছিলাম। আমাদের সঙ্গে থাকলে হয়তো জনসমর্থন কিছুটা হলেও মিলত।’ গত বিধানসভায় তৃণমূলের শরিক হয়ে লড়া বিমলের সরাসরি ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র বিরুদ্ধে শাসকদলের তরফেও যে পাল্টা ‘রণনীতি’ সাজানো হচ্ছে, তা জানিয়েছেন ওই নেতা। মোর্চা নেতাদেরও চোখেমুখেও হতাশার ছবি। একান্তে আলোচনায় তাঁরা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন, আগে যে বিমল হাঁক দিলে পাহাড়ে জনসমুদ্র লেগে যেত এখন তাঁকে আমরণ অনশনে বসতে দেখেও সাধারণ মানুষের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই!
এদিকে দীর্ঘ দশ বছর পর দার্জিলিংয়ে জিটিএ-র ভোট হতে চলেছে। শেষ ভোট হয়েছিল ২০১২ সালের ২৯ জুলাই। আগামী ২৬ জুন জিটিএ-র ভোট হবে বলে এদিনই সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছেন, পাহাড়ের সমস্ত মানুষ এই ভোটে অংশ নিতে পারবেন। পাহাড়ে উন্নয়নের সঙ্গে কোনও আপস করা হবে না। কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে বরদাস্ত করা হবে না। সরকারি নির্দেশিকা জারির সঙ্গে সঙ্গেই এদিন থেকেই পাহাড়ে ভোটের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। জিটিএর ৪৫টি আসনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজও শুরু হয়েছে। সাতদিন ধরে চলবে মনোনয়ন প্রক্রিয়া। জিটিএতে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ ১০ হাজার। বুথ প্রায় নয়শো। আর এই নির্বাচন ঘিরে পাহাড়ের আমজনতার মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। কারণ সকলেই বুঝছেন, এই জিটিএ নির্বাচনই পাহাড়ের বুকে ঠিক করে দেবে কে হবে পাহাড়ের শাসক। কোন দলের হাতে থাকবে পাহাড়ের রাশ।