নিজস্ব প্রতিনিধি: অভাবের সংসার সামলাতে বাবার সঙ্গে লটারি বিক্রি করছিলেন কলেজ ছাত্রী। কিন্তু ইচ্ছে ছিল সরকারি অফিসার হওয়ার। এবার তার স্বপ্ন পূরণের পথে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এলেন পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীরা। পুলিশের মানবিক সাহায্যে অভিভূত ওই ছাত্রী।
জলপাইগুড়ির আদর পাড়ার বাসিন্দা নবম্বিকা দাশগুপ্ত। ইংরেজি অনার্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স সম্পূর্ণ করেছেন। ইচ্ছে ডব্লুবিসিএস অফিসার হওয়ার। কিন্তু বাধ সাধল তাদের সংসারের আর্থিক অনটন। বাধ্য হয়ে বিএ পাশ করে বাবার সঙ্গে লটারি বিক্রি করছিল সে। ওই ছাত্রীর বাবা নাড়ুগোপাল দাশগুপ্ত একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে ডান হাত খুইয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে তিনি জলপাইগুড়ি স্টেশন বাজারে ছোট্ট একটি লটারির দোকান চালিয়ে সংসার চালিয়ে মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতেন। কোভিড পরিস্থিতিতে সংসারে আরও চেপে বসে আর্থিক সঙ্কট। মেয়ের ডব্লুবিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কোচিংয়ের খরচ জোগানোর সামর্থ তাঁর হয়ে ওঠেনি। এরপর মেয় নিয়ম করে সকাল-বিকাল তার বাবার লটারি দোকানে এসে ব্যাবসার কাজে হাত লাগাতে থাকে। সম্প্রতি এক সংবাদ মাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হয়।
এই খবর নজরে আসে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ কর্মীদের। এর পর তারা নিজেরাই ঠিক করেন মেয়েটির ইচ্ছে পূরণ করবেন সবাই মিলে। শুরু হয় খোঁজখবর নেওয়া। ডব্লুবিসিএস কোচিং এর জন্য একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খরচের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন সাতাত্তর হাজার টাকা খরচ। পুলিশকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন সেই খরচের পাশাপাশি নবম্বিকার পড়ার যাবতীয় খরচ চাঁদা তুলে বহন করবেন। সেই মতো শুরু হয় তাঁদের তৎপরতা। অবশেষে জোগাড় হয় প্রয়োজনীয় টাকা। এই উপলক্ষে মঙ্গলবার রাতে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় তাদের ডেকে নিয়ে সারপ্রাইজ দেন পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত। এদিন তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডি এস পি হেডকোয়ার্টার, থানার আই সি অর্ঘ্য সরকার। পুলিশের এমন মানবিক মুখ দেখে অভিভূত জলপাইগুড়ির বাসিন্দারা।
পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, ‘আমরা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর পড়ে জানতে পারি। এরপর আমাদের কোতোয়ালি থানার পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তার পাশে দাঁড়ানো হবে। আমরা তার ডব্লুবিসিএস পড়ার যাবতীয় খরচ বহন করব। তার জীবনের স্বপ্ন সফল হবে। তিনি একজন দক্ষ আধিকারিক হিসেবে আগামী দিনে কাজ করতে পারবে বলে আশা রাখছি।’ অন্যদিকে পুলিশের এমন উদ্যোগে খুশি নবাম্বিকা ও তাঁর বাড়ির লোকেরা।