নিজস্ব প্রতিনিধি: লোকসভা নির্বাচন(Loksabha Election 2024) ঘোষণার অনেক আগে থেকেই বাংলার বুকে ছোট-মাঝারি বিজেপি(Bengal BJP) নেতাদের সঙ্গে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের(Sukanta Majumdar) গলাতেও বেশ হুমকির সুরে একাধিকবার শোনা গিয়েছে, ‘এবার দিদির নয়, দাদার পুলিশ দিয়ে ভোট হবে। কেউ ট্যাঁ-ফুঁ করতে পারবে না।’ অথচ এখন সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর(Central Force) বিরুদ্ধেই নালিশ ঠুকতে সুকান্তকে ছুটতে হচ্ছে কমিশনের অফিসে। কেননা কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপি নেতাদের কথা শুনছে না। বাংলার পদ্ম নেতাদের ‘প্রত্যাশা’ ছিল, ভোটপর্বে দুর্বল সংগঠনের ফাটল মেরামতে সহায়ক হবে ‘দাদার পুলিশ’ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই মোতাবেক বেশ পরিকল্পনা করেই বাংলার বুকে ৭ দফার নির্বাচনের সঙ্গে রেকর্ড সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবি পূরণ হয়েছে। কিন্তু হিসাব মিলছে না বঙ্গ বিজেপির নেতাদের। কেননা কেন্দ্রীয় বাহিনী নাকি ‘পুরো পাল্টি খেয়েছে’। তাঁরা নাকি বঙ্গ বিজেপির নেতাদের কথা শোনা তো দূর, তাঁদের পাত্তাও দিচ্ছে না। আর তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ সুকান্ত নালিশ ঠুকতে চলেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের(ECI) কাছে।
পদ্ম শিবিরের নেতাদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, এবারে লোকসভা নির্বাচনে বাংলার বুকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যেভাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা কার্যত প্রথম ২ দফার নির্বাচনে মাঠে মারা গিয়েছে। আর তাই খোদ সুকান্ত মজুমদারের গলায় যেমন শোনা গিয়েছে, ‘হাতে লাঠি আছে। তার সঠিক ব্যবহার করা উচিত’, তেমনি রাজু বিস্তা আর কয়েক কদম এগিয়ে বলে বসেছেন, ‘দুষ্কৃতীদের গুলি করা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর। না হলে তো বন্দুকে মরচে পড়ে যাবে!’ সুকান্তের বক্তব্য নিয়ে যত না বিতর্ক বেঁধেছে তার থেকেই ঢের বেশি বিতর্ক বেঁধেছে বিস্তার মন্তব্য নিয়ে। কেননা একুশের ভোটে ঘটে যাওয়া শীতলকুচির ঘটনা এখনও বাংলার জনমানসে রীতিমত টাটকা রয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এখন বিজেপি নেতাদের কথা মতো না চলায় পদ্মনেতারা দাবি করছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। অগ্যতা তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সক্রিয় হতে হবে। মানে আরও একটা কী দুটো শীতলকুচি ঘটাতে হবে।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ভোটের রণক্ষেত্রে নিজেদের ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে যাদের ভাবতে শুরু করেছিল বিজেপি, সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীতেই এখন বিপদ দেখছে বাংলার পদ্ম শিবির? সুকান্ত ও বিস্তার মুখে পরপর বাহিনী নিয়ে অসন্তোষ উঠে আসায়, সেই সম্ভাবনাই জোরালো বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সঙ্গে অভিমত, প্রবল চাপের মুখে দিশাহারা অবস্থা সুকান্ত, বিস্তার মতো হেভিওয়েট প্রার্থীদের। তাঁরা নিজ নিজ ‘গড়’ রক্ষা করতে পারবেন কিনা, সেই আশঙ্কায় আগাম অজুহাতের রাস্তা তৈরি করে রাখছেন তাঁরা! তবে একই সঙ্গে ওয়াকিবহাল মহলের ধারনা, শীতলকুচির ঘটনা কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে দেশজুড়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদি সরকার যেভাবে গত ১০ বছর ধরে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে চলেছে তাতে দেশবাসীর একটা বড় অংশই মনে করছেন, এই বাহিনীর গেরুয়াকরণ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। এরা এখন আর দেশের সেবক নয়, পদ্মসেবক হয়ে গিয়েছে। এই ভাবমূর্তি বাহিনীর পক্ষে ক্ষতিকর বুঝেই এখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তারা যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে চাইছেন। কেননা কেন্দ্রে গণেশের গদি যে এবার ওল্টাতে চলেছে তা তাঁরাও সম্ভবত বেশ বুঝে গিয়েছেন।