-273ºc,
Friday, 2nd June, 2023 8:55 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি: জনসংযোগে জোর দিতে গিয়ে কার্যত নজীর গড়লেন বাংলার এক মন্ত্রী(Bengal Minister)। আমজনতাকে তো স্তম্ভিত করলেনই সেই সঙ্গে দলের নেতা থেকে কর্মী মায় সমর্থকদের সামনে এক দৃষ্টান্তও গড়ে দিলেন। তাঁর এহেন কম্মের ছবি এখন ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে(Social Media)। মন্ত্রী কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। বরঞ্চ তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন কীভাবে জনসংযোগে সমাজের প্রান্তিক শ্রেনীর মানুষদেরই পাশে টেনে নেওয়া যায়, তাঁদেরই একজন হয়ে ওঠা যায়। তিনি স্বপন দেবনাথ(Swapan Debnath)। রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের(Animal Resources Development Department) মন্ত্রী। গত শুক্রবার সকালেই তাঁর দেখে মিলেছিল তাঁরই নির্বাচনী কেন্দ্র পূর্বস্থলী দক্ষিণের নাদনঘাট এলাকায়। কিন্তু যেভাবে তিনি দেখা দিয়েছিলেন তার জেরে তাঁকে প্রথমে কেউ চিনতেই পারেননি, যখন পেরেছেন তখন কেউ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেননি আবার কেউ হতবাক হয়ে গিয়েছেন। সেই ঘটনারই ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরও পড়ুন কুলটির কয়লাখনিতে ভয়াবহ ধস, আটকে জন ২৫ কর্মী
ঠিক কী হয়েছিল শুক্রবার সকালে? নাদনঘাটের(Nadanghat) হেমাতপুরের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে বর্ধমান-নবদ্বীপ রাজ্য সড়ক। সেখানে শীতের সকালে অনেক লরি চালক, ভ্যান চালকেরা আগুন পোহান। হাতে পায়ে তাপ নেন। কেউ কেউ চাও খান। শুক্রবারও নাকি তেমনই চলছিল। আচমকা সেই সব লরি চালক ও ভ্যান চালকদের মাঝে লুঙ্গি পরে বসে পড়েন একজন। গায়ে সবুজ রঙের চাদর। মাটিতে বসেই তিনি হাত ও পায়ে তাপ নিতে শুরু করেন। তার জেরে প্রথমে লরি চালক ও ভ্যান চালকরা কিছুটা হকচকিয়ে যান। তার জেরে সেই লুঙ্গি পরা ব্যক্তিটি বলে ওঠেন, ‘খুব ঠান্ডা পড়েছে। তোমাদের সঙ্গে বসে একটু হাত পা গরম করে নিই।’ সেই সময়ে লরি চালকেরা তাঁকে চিনতা না পারলেও ভ্যান চালকেরা চিনতে পারেন। আর চিনতে পেরেই কিছুটা জবুথবু হয়ে যান। কেননা সেই লুঙ্গি পড়া ব্যক্তি আর কেউ নন, এলাকারই তৃণমূল বিধায়ক(TMC MLA) ও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। লুঙ্গি পরে শীতের সকালে তিনি চলে এসেছেন আগুন পোহাতে। আসলে এসেছেন জনসংযোগ সারতে, দিদির দূত হয়ে, আমজনতার হাঁড়ির হাল জানতে, সমাজের প্রান্তিক শ্রেনীর মানুষদের দুঃখকষ্ট অভাব অভিযোগের কথা জানতে।
আরও পড়ুন অনীতের লক্ষ্য কী এবার সাংসদ পদ, ভাবাচ্ছে তৃণমূলকেও
স্বপনবাবু রাজনীতি করার পাশাপাশি যাত্রাও করেন। তাই খুব সাধারন বেশে আমজনতার মধ্যে এভাবে চলে আসতে তাঁর একদমই অসুবিধা হয়নি। বরঞ্চ তাঁকে চিনতে পেরে ভ্যান চালকেরা উঠে দাঁড়ালে ও তাঁর পরিচয় জেনে লরি চালকেরা ওবাক হলে তিনি নিজেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁদের বলেন, ‘আরে বস, বস।’ তারপরেই আসল খবর নেওয়া শুরু করলেন, ‘তোমাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে? সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পে সুবিধা পাচ্ছ? সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে কারও অসুবিধা হচ্ছে?’ মন্ত্রীকে এভাবে কাছে পেয়ে নিজেদের মনের কথা উজাড় করে দেন ভ্যান চালক ও লরি চালকেরা। সেই ঘটনার ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরও পড়ুন তৃণমূল কর্মীকে খুন, দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ
তার জেরে এখন স্বপনবাবু জানিয়েছেন, ‘মানুষের কাছে যাওয়ার অভ্যাস আমার আছে। এটা আমি অনেকদিন ধরেই করি। হেমাতপুর, শ্রীরামপুরের মতো এলাকায় স্থানীয় গাড়ি চালকরা থাকেন। তাঁরা ভোরে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে আসেন। ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিনই তাঁরা এভাবে আগুন পোহান। কয়েকদিন ধরেই তাঁদের কাছে আসার কথা ভাবছিলাম। আগামী দিনে আবার আসব। ওঁদের কথা শুনব। কোনওদিনই মানুষের থেকে দূরে যাইনি। এর আগেও মাটিতে বসে খাবার খেয়েছি। হেঁটে মাঠে ঘুরেছি। বহু আগে থেকেই এমনটা করছি। সাধারণ মানুষের জন্যই জনপ্রতিনিধি বা মন্ত্রী হতে পেরেছি। তাই ওঁদের ভুললে চলবে না। সেদিন মাটিতে বসে আগুন পোহানোর সময় অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। মাটির সঙ্গে থাকলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। সেটা আবারও টের পেলাম।’ তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য নেতৃত্ব অনেকদিন ধরে এমনটাই চাইছেন। কালো কাচের গাড়ি ছেড়ে নেতারা মাটিতে নামুক। এমন নির্দেশ বহুবার শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই সেসবের তোয়াক্কা করেন না। জনপ্রতিনিধিদের একাংশ বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। কিন্তু স্বপনবাবু কার্যত দেখিয়ে দিলেন তিনি এখনও মাটির মানুষই আছেন।