নিজস্ব প্রতিনিধি: রবি দুপুরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Patgana) জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার(Barracpur Sub Division) খড়দহ(Khardaha) পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। একটি বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হল একই পরিবারের ৪ জনের পচাগলা দেহ(4 Decomposed Bodies Recovered)। বাবা, মা ও দুই সন্তানের দেহ উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিক অনুমান, বাড়ির বাকি সদস্যদের খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন গৃহকর্তা। স্ত্রীর পরকিয়া সম্পর্কের জেরেই গৃহকর্তা বৃন্দাবন কর্মকার এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলেই জানা গিয়েছে। ঘর থেকে মিলেছে একটি চিরকুট। যদিও তা বৃন্দাবনবাবুর নিজের হাতের লেখা কিনা তা জানা যায়নি। এদিন দুপুর নাগাদ পচাগলা গন্ধ পান খড়দহ পুরসভার ৫৪, এম এস মুখার্জি রোডের করবী টাওয়ার নামের আবাসনের বাসিন্দা ও আশেপাশের বাড়ির লোকেরা। তারপর তাঁরাই খবর দেন খড়দহ থানায়। পুলিশ(Police) ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ঢুকে চারজনের দেহ উদ্ধার করে। ঘরের মধ্যে তিন জায়গায় স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের দেহ পড়ে। আর সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় বৃন্দাবনের দেহ। পুলিশের অনুমান, কয়েকদিন আগেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের।
১৯ নং ওয়ার্ড এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলর মৌসুমী পাল জানিয়েছেন, ওই ফ্ল্যাটের আসল মালিক অরূপ গঙ্গোপাধ্যায় ফোন করে তাঁকে বলেন যে তাঁর ফ্ল্যাটে থাকেন বৃন্দাবন কর্মকার ও তাঁর পরিবার। কিন্তু তাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না গত ২ দিন ধরে। ফোনেও কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। মৌসুমীদেবী তাঁকে বিষয়টি থানায় জানানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু তারই মধ্যে এলাকায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে পচাগলা দেহ নিয়ে। তখনই কাউন্সিলর জানতে পারেন, কর্মকার পরিবারের ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। স্বামী, স্ত্রী ছাড়া তাঁদের ৮ বছরের ছেলে, ১৬ বছরের মেয়েরও মৃত্যু হয়েছে। জানা গিয়েছে, বৃন্দাবনবাবু পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। এবার এলাকার কালীপুজোয় তিনি মূর্তি, কাপড় সব দান করেছেন। বিসর্জনেও ছিলেন এলাকাবাসীর সঙ্গে। কিন্তু দিনকয়েকের মধ্যে কী এমন ঘটল, যাতে তাঁরা সকলে মারা গেলেন, তা ভেবে বিস্মিত প্রতিবেশীরা!
বৃন্দাবনবাবুর পরিবারের সদস্যরা ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন। ভাগ্নি জানাচ্ছেন, মামার চিড়িয়ামোড়ে দর্জির দোকান ছিল। ৫ বছর আগে তা বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আদর্শপল্লির জমি, বাড়িও বিক্রি করে দিয়েছিলেন বৃন্দাবনবাবু। কিন্তু কী কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল, সে বিষয়ে কোনও আন্দাজ পাচ্ছেন না তাঁরাও। যদিও সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃন্দাবনবাবুর স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক ছিল যা বৃন্দাবনবাবু জানতেন। এদিন যে চিরকুট ঘর থেকে মিলেছে তা পুলিশ প্রাথমিক ভাবে ‘সুইসাইড নোট’ হিসাবেই নিচ্ছে। তাঁদের ধারনা, স্ত্রী পরকীয়ায় ক্ষিপ্ত হয়েই সম্ভবত বৃন্দাবন রাগের বশে এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। আত্মীয়দের মারফত পুলিশ জানতে পেরেছে, স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তাঁকে সাবধান করেন বৃন্দাবন। কিন্তু স্ত্রী অন্য সম্পর্ক থেকে বেরোতে পারেননি। এই রাগেই স্ত্রীকে খুন করেন ব্যবসায়ী। খুনে ব্যবহার হয় ধারালো অস্ত্র। পুলিশ জানিয়েছে, যে চিরকুট মিলেছে বাড়িতে তাতেই স্ত্রীর অন্য সম্পর্কের কথা লিখে গিয়েছেন বৃন্দাবন। ৪টি দেহই উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ।