নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয় রে ছুটে আয় আয় আয়’। ভোর থেকেই সানাইয়ের সুর। তার পরেই ছাতিমতলায় উপাসনা। সমবেত কন্ঠে ‘মোরে ডাকি লয়ে যাও মুক্ত দ্বারে’। তারপরেই এল মুখ্যমন্ত্রীর(Chief Minister of West Bengal) শুভেচ্ছা বার্তা। ৮ পৌষ, রবিবার চিরাচরিত প্রথা মেনে শুরু হয়ে গেল শান্তিনিকেতনের(Shantiniketan) ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা(Poush Mela)। এবার ১২৫তম। রীতি মেনে বৈতালিক এবং উপাসনার মধ্যে দিয়ে শান্তিনিকেতনে শুরু হয়ে গেল ১২৫তম পৌষমেলা। এদিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ উপাসনায় অংশ নেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের(Viswabharati University) ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্জীবকুমার মল্লিক। তবে এবার মেলায় আয়োজনে নেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। রাজ্য সরকার বীরভূম জেলার প্রশাসনকে দিয়ে ‘বিকল্প’ পৌষমেলার আয়োজন করছে। তবে তা হচ্ছে পৌষ মেলার নিজস্ব প্রাঙ্গণ বোলপুর(Bolpur) শহরের কান ঘেঁষে থাকা শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির মাঠেই। এদিন বেলা ১১টা নাগাদ মেলার মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হয়। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) বীরভূমের জেলাশাসকের বিধান রায়ের ফোনের মাধ্যমে সবাইকে শুভেচ্ছাবার্তা দেন। তার পরেই আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়ে যায় এ বারের পৌষমেলা।
বিশ্বভারতী এ বার মেলা না করলেও জেলা প্রশাসনের আবেদনে তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রদর্শনী করছে। মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তার পর আনুষ্ঠানিক ভাবে মেলার উদ্বোধনের পর প্রদীপ প্রজ্জলনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন দুই প্রবীণ আশ্রমিক ও বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক সুনীতিকুমার পাঠক ও কল্পিকা মুখোপাধ্যায়। এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, জেলার দুই সাংসদ, বিধায়ক, বিশ্বভারতীর প্রতিনিধি-সহ অন্যরা। ২০১৯ সালে শেষ বার শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির মাঠে হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা। তারপর থেকে আর হয়নি মেলা ৷ তবে বোলপুর ডাকবাংলো মাঠে ২০২১ ও ‘২২ সালে বিকল্প পৌষ মেলা করেছিল রাজ্য সরকার। এবার কিন্তু পূর্বপল্লীর মাঠেই আগের মতোই মেলা হচ্ছে। আর তার জন্য শনিবার থেকেই পর্যটকদের ঢল নামতে শুরু করেছে বোলপুর শান্তিনিকেতনে। সেখানকার হোটেল, লজ, হোমস্টেগুলিতে তিলধারণের জায়গা নেই।
এবার মেলায় ১২০০-র বেশি স্টল থাকছে। সেই সঙ্গে থাকছে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এবারই প্রথম বিশ্বভারতীর মাঠে পৌষ মেলা করছে রাজ্য সরকার। দীর্ঘ টালবাহানার প্রায় তিন বছর পর সব মতানৈক্য কাটিয়ে রবিবার থেকে শান্তিনিকেতনে শুরু হল পৌষমেলা। মেলা শুরু হতেই সর্বত্র খুশির হাওয়া। দেশ বিদেশ থেকে হাজারা হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছে শান্তিনিকেতনে। মেলা চলবে পাঁচ দিন। কড়া নিরাপত্তার পাশাপাশি দূষণ মুক্ত মেলা করতে বদ্ধ পরিকর জেলা প্রশাসন। মেলায় এবার হস্তশিল্পীদের জন্য থাকছে বিশেষ প্যাভিলিয়ন। মেলার সুরক্ষার বিষয়টিও জোরদার করা হয়েছে। ১৬০০-এর বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। বিশেষ করে মেলার মধ্যে থাকছে ওয়াচ টাওয়ার। লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এর পাশাপাশি পৌষমেলার রুট ম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। যা শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে দূরদূরান্ত থেকে যাঁরা আসবেন তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়। ওই ম্যাপ দেখে তাঁরা পৌঁছে যাবেন মেলার মাঠে এবং মেলায় কোথায় কী রয়েছে সেটাও এই ম্যাপের মধ্যে রয়েছে।