নিজস্ব প্রতিনিধি, উত্তর ২৪ পরগনা: সোমবার সকালে কুয়াশা মাখা ভোরে উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা করুণাময়ী কালীমন্দিরে স্থানীয়রা দেখতে পান মন্দিরের গর্ভগৃহের প্রবেশদ্বার খোলা। চুরি হয়ে গিয়েছে মা কালীর সোনা রুপোর গয়না-সহ প্রচুর মূল্যবান সামগ্রী। সূত্রের খবর, কালীপ্রতিমার অলংকার, সোনার খড়গ-সহ পুজার সামগ্রী মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার চুরি হয়েছে করুণাময়ী কালীমন্দিরে। সঙ্গে সঙ্গেই খবর যায় পুলিশে। ততক্ষণে রটে গিয়েছে মন্দিরে চুরির খবর।
আশেপাশের প্রচুর মানুষ জমা হয়ে যায় করুণাময়ী কালীমন্দিরে। কিভাবে এই জাগ্রত ও প্রাচীন মন্দিরে চুরি হল তা নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয় মন্দিরের সামনে। এরপরই স্থানীয় মানুষজন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে আগুন জ্বেলে অবরোধ শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় আমডাঙা মোড়ে। দীর্ঘক্ষণ অররুদ্ধ থাকে কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগরগামী গুরুত্বপূর্ণ এই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। যদিও ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
আমডাঙা ব্লকের করুণাময়ী কালীমন্দির প্রায় ৪৭৭ বছরের পুরোনো। মন্দিরের নাম-যশ ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে দেশ ও বিদেশেও। বছর ভর এখানে পূণ্যার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। মা কালীর কাছে মানত করে ফলও পান পূণ্যার্থীরা। তাই মায়ের কাছে অনেকেই সোনা বা রুপোর গয়না দান করেন। ফলে মন্দির ও সংলগ্ন এলাকায় কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে মন্দির কমিটি এবং প্রশাসন। গোটা মন্দির চত্বর মুড়ে ফেলা হয়েছিল সিসিটিভি ক্যামেরায়। পাশাপাশি রাতে প্রশাসনের তরফে আলাদা করে পাহাড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। জানা গিয়েছে, মন্দিরের গর্ভগৃহে মূল বেদী মন্দির বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যদি কেউ স্পর্ষ করে তাহলেই সাইরেন বেজে উঠবে। কিন্তু এত কিছু ব্য়বস্থার পরও কীভাবে চুরি হল সেটা নিয়েই ধন্ধে পুলিশ-প্রশাসন।
স্থানীয়দের দাবি, খবর পাওয়া মাত্রই তাঁরা ছুটে যান মন্দির চত্বরে। দেখেন, মন্দিরের মূল দ্বারে ঝুলছে তালা। ভিতরে রয়েছে পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি। এতেই তারা নিশ্চিত হন চুরির বিষয়ে। এরপরই তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারির দাবিতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন স্থানীয়রা। তাঁদের প্রশ্ন, মন্দিরে এত নিরাপত্তার ঘেরাটোপ এড়িয়ে কীভাবে মন্দিরে প্রবেশ করল দুষ্কৃতীরা? চোরেরা জানলা কেটে ভিতরে ঢুকেছে, অথচ কেউ টের পেল না? বেদিতে কেউ হাত দিলেও কেন সাইরেন বাজল না? স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বর্তমান মন্দির কমিটির আমলেই পরপর ৩ বার চুরি হল। তাঁদের আরও দাবি, চোরেদের সঙ্গে প্রশাসন ও মন্দির কমিটি জড়িত রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে, দ্রুতই অভিযুক্তদের ধরা হবে।