নিজস্ব প্রতিনিধি: গঙ্গা পাড়ের দুই শহর। যমজনগরী। একটি নাম কলকাতা(Kolkata), অন্যটি হাওড়া(Howrah)। এই দুই শহরকে সর্বপ্রথম জুড়ে ছিল হাওড়া ব্রিজ বা রবীন্দ্র সেতু। পরবর্তীকালে তৈরি হয় বালি ব্রিজ বা বিবেকানন্দ সেতু। আরও পরে নয়ের দশকে দুই শহরকে জুড়েছে দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতু। হালে গড়ে উঠেছে নিবেদিতা সেতুও। কিন্তু এই ৪ সেতু দুই শহরের যানবাহণের চাপ পুরোপুরি কমাতে পারছে না। বিশেষ করে ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে এই ৪ সেতু যে যথাযথ নয় সে তথ্য নানা সমীক্ষায় উঠে এসেছে। তাই কলকাতা শহরে আসা ও সেখান থেকে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারী যানবাহণের জন্য যেমন গঙ্গার নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণের কাজ শুরু হতে চলেছে তেমনি দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতুর ওপর যানবাহণের চাপ কমাতে এবার তৈরি হতে চলেছ তৃতীয় হুগলি সেতু(3rd Hooghly Bridge)। আর সেই সেতুর মাধ্যমে কলকাতার সঙ্গে শুধু যা হাওড়ার যোগসাধন হতে চলেছে তাই নয়, বারাণসী থেকে বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে একটি এক্সপ্রেসওয়ে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি ছুঁয়ে মিশবে এসে এই সেতুতে।
জানা গিয়েছে, কেন্দ্র সরকার উত্তর ভারতের সঙ্গে কলকাতাকে জুড়তে তৈরি করছে প্রায় ৫৫০কিমির কলকাতা-বারাণসী এক্সপ্রেসওয়ে(Kolkata Varanasi Expressway)। সেই এক্সপ্রেসওয়ে ধরে মাত্র ৮ ঘন্টায় কলকাতা থেকে সড়কপথে পৌঁছে যাওয়া যাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে। সেই রাস্তারই ২৫৬কিমি অংশ থাকবে বাংলার বুকে। পুরুলিয়ার ঝালদা হয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি বাংলায় প্রবেশ করবে। তারপর বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি ও হাওড়া ছুঁয়ে তৃতীয় হুগলি সেতু হয়ে তা প্রবেশ করবে কলকাতার বুকে। এই সেতু নির্মাণ হলে রবীন্দ্র সেতু ও বিদ্যাসাগর সেতুর ওপর যানবাহণের চাপ কমার পাশাপাশি বৃহত্তর কলকাতার সঙ্গে রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তের জেলাগুলির যোগসাধন খুব সহজেই করে দেবে। সব থেকে বড় কথা এই সেতুর জন্য কোনও উচ্ছেদ বা পুনর্বাসন সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি হবে না। দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতু তৈরির সময়ে হাওড়া শহরের শিবপুর এলাকায় কয়েক হাজার বাসিন্দাকে চূড়ান্ত দুর্ভোগ ও সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল। এক্ষেত্রে সেই সমস্যা তৈরি হবে না।
জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই এই তৃতীয় হুগলি সেতু নির্মাণে এগিয়ে এসেছ কেন্দ্র সরকারের অধীনে থাকা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ(NHAI)। রাজ্য সরকার দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতুর ওপর চাপ কমাতে ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ের যানজট কাটাতে নবান্নের কাছ থেকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক বা বোম্বে রোডের অঙ্কুরহাটি পর্যন্ত একটি উড়ালপুল নির্মাণ করতে চাইছিল। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের কিছু আধিকারিক কেন্দ্রের সঙ্গেও কথা বলেন। তখনই দুটি প্রকল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক হয়েছে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ওপর যে উড়ালপুল তৈরি হবে তা দ্বিতল বিশিষ্ট হবে। এখন কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যেমন গাড়ি যাচ্ছে তেমনই যাবে। তার ওপর দ্বিতল উড়ালপুল তৈরি হবে। মাঝের তলা দিয়ে বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে যাতায়াত করা যাবে। তৃতীয় তল দিয়ে তৃতীয় হুগলি সেতুর যানবাহণ চলবে। আগামী বছর থেকেই এই দ্বিতল উড়ালপুল নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে। বালিতে যেমন বালি ব্রিজ বা বিবেকানন্দ সেতু ও নিবেদিতা সেতু পাশাপাশি রয়েছে ঠিক তেমনি দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতুর পাশেই গড়ে উঠবে তৃতীয় হুগলি সেতু বা রাজা রামমোহন রায় সেতু।