নিজস্ব প্রতিনিধি: মাস খানেক আগে নির্দিষ্ট এজেন্ট মারফত ভিন দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন নদিয়ার(Nadia) বেশ কয়েকজন যুবক। কারও বাড়ি কল্যাণী, তো কারও আবার করিমপুরে। দু’টো টাকা বেশি রোজগারের আশায় দুবাইয়ে(Dubai) পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁরা। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের আর্থিক দুর্দশা ঘোচানো। বাবা-মা ও স্ত্রী সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, সেখানে গিয়ে যে চরম বিপাকে পড়তে হবে, তা টের পাননি। সেখানে গিয়ে কিছুদিন কাজ করার পর বুঝতে পারেন, তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। সেই মতো তাঁরা বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাঁদের ভিসা(Visa) ও পাসপোর্ট(Passport) কোম্পানি আটকে রেখে দিয়েছে। এই অবস্থায় সেখান থেকে কীভাবে বাড়ি ফিরবেন ভেবে পাচ্ছেন না নদিয়া জেলার ১৩জন শ্রমিক(Labours)। তাঁরা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বাড়ি ফেরানোর আর্জি জানিয়েছেন। এই অবস্থায় চরম উদ্বেগে দিন কাটছে পরিবারের। গোটা বিষয়টি তাঁরা রাজ্য সরকারের গোচরে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আরও পড়ুন যাদবপুরে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য
ওই শ্রমিকদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুবাইয়ে ভালো কাজ দেওয়ার নাম করে নিয়ে গিয়ে ১৬ ঘণ্টা খাটানো হচ্ছে ওই শ্রমিকদের। জল বয়ে আনতে হচ্ছে কয়েক কিমি দূর থেকে। সকলকে একসঙ্গে ছোট্ট একটি ঘরে রাখা হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাঁদের জীবন। খাবারের জোগান পেতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভিডিও বার্তায় তাঁরা বাড়ি ফেরানোর আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে ফিরবেন তা তাঁরা জানেন না। প্রসঙ্গত, বিদেশে মোটা মাইনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতীয় যুবকদের নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেও এরকম ঘটনা সামনে এসেছিল। দেগঙ্গা, বাগদা, হেলেঞ্চা সহ বিভিন্ন এলাকার ৪৫জনকে কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় দুবাইয়ে। সেই ঘটনাতেও নদিয়ার নাম জড়িয়েছিল। হাঁসখালির সিলবেড়িয়ার এক এজেন্ট নাকি তাঁদের নিয়ে যায়। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল এবারেও। এবার ধানতলা, করিমপুর ও কল্যাণী এলাকার ১৩জনকে দুবাইতে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন নেত্রীর আদর্শ, নেত্রীর জয়, INDIA হোক মমতাময়
ওই শ্রমিকদের পরিবারের তরফে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। করিমপুর-২ ব্লকের রহমতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোয়াশের বাসিন্দা রুপালি হালদার জানিয়েছেন, ‘আমাদের পরিবারের ৪জন দুবাইয়ে কাজের জন্য গিয়েছিল। দেড় মাস হয়ে গেল ওরা কাজে গিয়েছে। ওদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ওরা ওখানে থাকতে চাইছে না। ৫ হাজার লোকের রান্না করার জন্য ১০টা গ্যাস রয়েছে। ওরা বলছিল, চার পাঁচ দিন হল ভাত খেতে পায়নি। জল আনতে দু’মাইল যেতে হচ্ছে। যে কোম্পানিতে কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার পরিবর্তে অন্য কোম্পানিতে কাজ করাচ্ছে।’ বীরনগর মানিকতলার বাসিন্দা স্বপন বিশ্বাস সেখানে আটকে রয়েছেন। তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা বিশ্বাস বলেন, ‘আমার স্বামীকে কারপেন্টারের কাজ দেওয়া হবে বলে নিয়ে গিয়েছিল। ভালো মাইনে দেবে বলেছিল। দত্তপুলিয়ার একটি এজেন্টের মাধ্যমে গিয়েছিল। ওদের দিয়ে এখন ১৬ ঘণ্টা কাজ করানো হচ্ছে। শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায় না। পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’