নিজস্ব প্রতিনিধি: কোচবিহার জেলার দিনহাটায় আগামী ৩০ অক্টোবর হতে চলেছে উপনির্বাচন। সেই উপনির্বাচনে দলের প্রার্থীর হয়ে বুধবার ভোট প্রচারে গিয়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন ও বর্তমান সভাপতি। কিন্তু ভোট প্রচারের পাশাপাশি তাঁরা গোপনে বৈঠক সারেন বিএসএফ কর্তার সঙ্গেও। সেই বৈঠকের খবর সামনে আসতেই শোরগোল পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। অভিযোগ উঠেছে উপনির্বাচনে সীমান্তবর্তী এলাকা হিসাবে পরিচিত দিনহাটায় বিএসএফ জওয়ানদের রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করার লক্ষ্য নিয়েই ওই বৈঠক করা হয়েছে। এরপরেই এদিন এই বিষয়টি নিয়ে, বঙ্গ বিজেপির দুই নেতা দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদার এবং বিএসএফ কর্তার বিরুদ্ধে, নির্বাচন কমিশনে নালিশ ঠুকলেন দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহের নির্বাচনী এজেন্ট।
বুধবার দিনহাটায় প্রচারের ফাঁকে দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদার কোচবিহার শহর সংলগ্ন কাঁকরিবাড়িতে বিএসএফের কার্যালয়ে গিয়ে গোপনে বৈঠক করেন বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে। সেই বৈঠকের খবর জানাজানি হয়ে যায় বিকালের মধ্যেই। তার জেরে দিনহাটায় তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ সরাসরি তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট করে লেখেন, ‘বিজেপির নেতারা বিএসএফ মামাদের সঙ্গে দেখা করলেন। বললেন দিনহাটায় সাহায্য চাই মামা।’ সেই পোস্টের পাশাপাশি এদিন উদয়নবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানিয়েছেন এই ঘটনা নিয়ে। একই সঙ্গে তাঁরা কমিশনকে অনুরোধ করেছেন দিনহাটায় বিএসএফের কোনও কোম্পানিকে যেন মোতায়েন করা না হয়। তাঁদের দাবি যেভাবে নির্বাচনবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই গোপন বৈঠক করা হয়েছে তা নির্বিঘ্নের নির্বাচনের পরিপন্থী। এই বৈঠক আদর্শ আচরণবিধিও লঙ্ঘণ করেছে। তাই কমিশন যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।
যদিও এই অভিযোগ ও ঘটনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদার। দিলীপ এই ঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘আমি যেখানেই যাই সেখানেই বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলি। শান্তিশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করি। দিল্লিতেও গিয়েও তাই করি। কোচবিহারেও তাই করেছি।’ একই সুর সুকান্তের গলাতেও। তাঁর দাবি, ‘দিলীপ ঘোষ লোকসভার বিশেষ কমিটির সদস্য। তাই তিনি বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। এনিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।’ যদিও ওয়াকিবহল মহলের দাবি, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাজ্যগুলিকে অন্ধকারে রেখেই যেভাবে বিএসএফের কাজের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে দিয়েছে তা দেশজুড়ে বড় বিতর্ক তৈরি করে দিয়েছে। বিএসএফের জওয়ানরা আগে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত এতদিন গ্রেফতার, বাজেয়াপ্ত এবং তল্লাশি করতে পারত। কিন্তু এখন সেই সীমাই বাড়িয়ে ৫০কিমি করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বাংলা, পঞ্জাব ও অসমে এই নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এই নয়া নির্দেশিকার জেরে দিনহাটা বিধানসভার একটা বড় অংশই বিএসএফ জওয়ানদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। আর তার জেরেই বিএসএফ কর্তার সঙ্গে বিজেপির দুই নেতার বৈঠক ঘিরে বিতর্কের জন্ম হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী তথা জেলার একমাত্র সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক মাত্র ৫৬ ভোটে জিতেছিলেন। এখন সেই নিশীথ কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে রয়েছে বিএসএফ। দিনহাটায় বিজেপি জিততে পারবে না বলেই এখন বিএসএফকে মাঠে নামিয়ে বন্দুকের জোরে ভোটে জিততে চাইছে। শীতলকুচি তার সবথেকে বড় উদাহরণ।