নিজস্ব প্রতিনিধি: ধার কমেছে, কিন্তু ভারটা এখনও আছে। কেননা তিনি বাংলা থেকে একা হাতে কংগ্রেসকে(INC) বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিলেও এখনও তিনি নিজে বহাল তবিয়তে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হয়ে আছেন। রয়েছেন ৫ দফার সাংসদ হিসাবেও। আর আছে বাংলার গণশত্রু সিপিআই(এম)’র সঙ্গে গলায় গলায় দোস্তি ও তৃণমূলের(TMC) প্রধান শত্রু বিজেপির(BJP) সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া। এই বোঝাপড়ার জন্যই একুশের ভোটে তাঁরই জেলা থেকে বাম-কংগ্রেস ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেলেও বিজেপি ২টি আসন পেয়ে গিয়েছিল। আবার উনিশের ভোটে যে বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি ৪০ হাজারেরও বেশি লিড পেয়েছিলেন, সেই বহরমপুরে একুশের ভোটেই ফুটেছিল পদ্মফুল। বোঝাপড়া না থাকলে কী এমনটা হয়! আর তাই তাঁকে মানে অধীররঞ্জন চৌধুরীকে(Adhir Ranjan Chowdhury) হারাতে এবার উঠেপড়ে লেগেছে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। মুর্শিদাবাদের মাটি থেকে অধীররাজের অবসান ঘটাতে এবার সেই তৃণমূলের ভরসা দেশের বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেট টিমের প্রাক্তন খেলোয়াড় ইউসুফ পাঠান(Yusuf Pathan)। আর এই পাঠানবাজিই এখন কড়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে অধীরের জয়ের পথে।
তৃণমূলের জন্ম ১৯৯৭ সালে। আর অধীর সাংসদ হিসাবে কাজ করে চলেছেন ১৯৯৯ সাল থেকে। সেই হিসাবে দেখলে তৃণমূলের জমানাতেই তাঁর জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে উত্থান। বাংলার রাজনীতিতেও তাঁর জমকালো প্রবেশ সেই সময় থেকেই। যদিও তার আগে থেকেই তিনি ছিলেন রাজনীতিতে, ছিলেন বিধায়কও। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বপাটে অধীরের উপস্থিতি যেন বাংলার অঘোষিত বিরোধী দলনেতা হিসাবেই। যদিও বাংলার মাটিতে বিজেপির উত্থান এবং শুভেন্দু অধিকারীর বিরোধী দলনেতা হিসাবে বিচরণ অধীরের কদরের জৌলুস কেড়ে নিয়েছে। কেননা জৌলুস এখন ভাগ হচ্ছে দুই ভাগে। বড়ওয়ান, কান্দি, ভরতপুর, রানিনগর, বেলডাঙা, নওদা এবং বহরমপুর – এই ৭ বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে বহরমপুর লোকসভার(Baharampur Constituency) গঠন। একসময় এই ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রই ছিল কংগ্রেসের দুর্গ। মাঝেমধ্যে অবশ্য বামেদের দাপটও নজর এসেছে। কিন্তু বামেদের দাপাদাপি অধীর দাপট ফিকে করে দেয়নি, বরঞ্চ অধীররাজ আজ কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে তৃণমূলের দাপটে। জেলা থেকে আগেই বিলুপ্ত হয়েছে, বাম-কংগ্রেস। মিটমিট করছে বিজেপি। এবার তাঁর হার সম্পন্ন হলেই জেলায় একাধিপত্য কায়েম হবে জোড়াফুলের। আর তিনিও বোধহয় বুঝে গিয়েছেন, জেতা এবার খুব কঠিন। নয়তো কেনই বা বলবেন, হেরে গেলে বাদাম বিক্রি করতে হবে!
অধীর যখন তৃতীয়বার সাংসদ হয়েছিলেন বহরমপুর থেকে সেই ২০০৯ সালে তিনি পেয়েছিলেন ৪৬ শতাংশের মতো ভোট। তৃণমূলের কিন্তু সেসময়ে খড়কুটোও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বামেরা ছিল দ্বিতীয় স্থানে। অথচ সেই নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে বয়ে গিয়েছিল পরিবর্তনের হাওয়া। একা তৃণমূলই সেই নির্বাচনে ১৯টি আসন জিতেছিল। অথচ বহরমপুরে সেই তৃণমূল হেরে গিয়েছিল অধীরের কাছে। ২০১৪ সালের লোকসভার নির্বাচনে তৃণমূল বামেদের হটিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেও সাংসদ পদ ধরে রেখেছিলেন অধীর। ভোট প্রাপ্তির হার যদিও কমে হয়েছিল ৪০ শতাংশ। ৫ বছর বাদে ২০১৯ সালের নির্বাচনে ছবিটা অনেকটাই বদলে দেয় তৃণমূল। সেবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে পেয়েছিল ৪০ শতাংশ ভোট। যদিও অধীর পেয়েছিলেন ৪৬ শতাংশ ভোট। এই এই বাড়তি ৬ শতাংশ ভোটের দৌলতেই নিজের সাংসদ পদ ধরে রাখতে পেরেছিলেন এখনকার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। অধীরের বিরুদ্ধে এই ধারাবাহিক লড়াইয়ে তৃণমূলের এব থেকে বড় প্লাস পয়েন্ট প্রতি নির্বাচনে অধীরের জয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনা।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে অধীর জিতেছিলেন ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে, যার মধ্যে শুধুমাত্র বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই তিনি পেয়েছিলেন ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটের লিড। এবারে এই লিডের রাস্তা বন্ধ করে দিতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল। তবে জোড়াফুল শিবিরের নেতাদের দাবি, এবার এখানে খোলাচোখে ত্রিমুখী লড়াইয়ের ছবি দেখা গেলেও আদপে, লড়াই হচ্ছে দুইজনের মধ্যে। প্রথম জন কংগ্রেস প্রার্থী অধীর নিজে, আর দ্বিতীয় জন তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠান। বাকি বাম-বিজেপি আছে অধীরের পাশেই। যদিও বিজেপি এখানে আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছে। তিনি হলেন, পেশায় চিকিৎসক নির্মল সাহা। কিন্তু সেটা লোক দেখানো লড়াই মাত্র। অয়াদতে এখানে অধীররাজ কায়েম রাখতে এককাট্টা হয়েছে রাম-বাম-কংগ্রেস। যেন তেন প্রকারণে তৃণমূলকে হারাতে বদ্ধপরিকর তাঁরা। আর এই পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে তৃণমূলের ভরসা ইউসুফ পাঠান। আর তৃণমূলের ভরসা, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা মোট ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রাপ্ত প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভোটের লিড।