নিজস্ব প্রতিনিধি: রাত পোহালেই ভোট। বুথে বুথে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের জন্য লাইন দেবেন দেশের ৯৪টি লোকসভা কেন্দ্রের কয়েক কোটি ভোটার। আগামিকাল দেশে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ করা হবে। বাংলাতেও কাল তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ করা হবে ৪টি লোকসভা কেন্দ্রে। এই ৪ কেন্দ্র হল মালদা উত্তর ও দক্ষিণ এবং জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ(Murshidabad Constituency)। এই ৪ কেন্দ্রের মধ্যে উনিশের ভোটে মালদা উত্তর গিয়েছিল বিজেপির দখলে। মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র ধরে রেখেছিল কংগ্রেস। জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ গিয়েছিল তৃণমূলের(TMC) দখলে। এই ৪ কেন্দ্রের মধ্যে এবার সব থেকে কড়া ও কঠিন লড়াই হচ্ছে অবশ্যই মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে। তৃণমূলের লড়াই আসন ধরে রাখার। বাম-কংগ্রেস জোটের(Left Congress Alliance) লড়াই সেই আসন ছিনিয়ে আনার। বিজেপির(BJP) লড়াই, দুই শিবিরের যুদ্ধের মাঝে নিজেদের পায়ের নীচের মাটি ধরে রাখার।
উনিশের লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খান। তিনি তাঁর নিকটতম কংগ্রেস প্রার্থী আবু হেনাকে হারিয়েছিলেন ২ লক্ষ ২৬ হাজার ভোটে। তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি এবং চতুর্থ স্থানে ছিল বামেরা। বিজেপি ওই নির্বাচনে পেয়েছিল প্রায় আড়াই লক্ষ ভোট আর বামেরা পেয়েছিল ১ লক্ষ ৮০ হাজার ভোট। ওই নির্বাচনে বাম আর কংগ্রেসের মধ্যে কোনও জোট না থাকায় তৃণমূলের জয় অপেক্ষাকৃত সুবিধা হয়েছিল। কিন্তু এবারে ওই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি। পরিবর্তে তাঁরা সেই আসন ছেড়ে দিয়েছে বামেদের। এবারেও তৃণমূল ওই আসনে প্রার্থী করেছে আবু তাহের খানকে। বামেরা প্রার্থী করেছে মহম্মদ সেলিমকে। বিজেপি দাঁড় করিয়েছে, গৌরি শঙ্কর ঘোষকে। ঘটনা হচ্ছে, উনিশের লোকসভা ভোটে তৃণমূল ২ লক্ষ ২৬ হাজার ভোটে জিতেছিল ঠিকই, কিন্তু যদি সেই নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট হতো, তাহলে সেই জয়ের ব্যবধান কিন্তু অনেকটাই কমে যেত। হয়তো সেক্ষেত্রে জয় আসতো ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। সেই কথা মাথায় রেখেই এবার জোটে গুরুত্ব দিয়েছে বাম আর কংগ্রেস যাতে দুই দলের ভোট এক বাক্সে পড়ে।
মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে ভগবানগোলা, রানীনগর, মুর্শিদাবাদ, হরিহরপাড়া, ডোমকল, জলঙ্গি এবং করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্র। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ বিধানসভা কেন্দ্র ছাড়া বাকি ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রতেই একুশের ভোটে জিতেছে তৃণমূল। সেই হিসাবে তৃণমূল মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে ৩ লক্ষ ভোটে এগিয়ে থেকে আগামিকাল তাঁদের লড়াই শুরু করতে চলেছে। কিন্তু এই হিসাবের বাইরেও থেকে যাচ্ছে আরও একটি হিসাব যার নাম মহম্মদ সেলিম(Mohammad Salim)। তিনি উনিশের ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে। সেখানে সেই নির্বাচনে তৃণমূলের জয় আটকে দিয়েছিলেন। বিজেপি সেখানে জিতেছিল মাত্র ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। অথচ সেলিম টেনেছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ভোট। অনেকেরই ধারনা, সেলিম আদতে সংখ্যালঘু ভোট টানতে ওস্তাদ। আর তাই যে সংখ্যালঘু ভোটের ওপর দাঁড়িয়ে আজ মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র তৃণমূল ধরে রেখেছে সেই সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে থাবা মারতেই বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী করেছে সেলিমকে। এই একই আশঙ্কার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই লোকসভা কেন্দ্রের প্রচারে এসে বার বার বলেছেন। দেখার বিষয় এলাকাবাসী কী করেন।