নিজস্ব প্রতিনিধি: শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে বীরভূম(Birbhum) জেলার রামপুরহাট(Rampurhat) থানার বকটুই(Boktui) গ্রামে। কার্যত একের পর এক বাড়ি সেখানে শূনশান পড়ে রয়েছে। অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন বা যাচ্ছেন। যারা রয়েছেন তাঁরা বেশ আতঙ্কেই রয়েছেন। সেই আতঙ্কের মধ্যেই কিন্তু মাথাচাড়া দিচ্ছে বিতর্ক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি স্বজনহারা মানুষগুলো সরব হয়েছেন দোষীদের কড়া শাস্তি চেয়ে। সরব হয়েছেন সিবিআই(CBI) তদন্ত চেয়ে। বিতর্ক দানা বেঁধেছে মৃতদেহ শনাক্তকরণ ও তা দ্রুত সৎকার করা নিয়ে। প্রশ্ন উঠেছে যাকে দিয়ে সেই শনাক্তকরণের কাজ করানো হয়েছে তাঁর পরিচয় নিয়েও। বিতর্ক দানা বেঁধেছে মৃতের সঠিক সংখ্যা নিয়েও।
ঠিক কী অভিযোগ? বিতর্কই বা কোথায়? বকটুই গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৮। স্বজনহারাদের দাবি, ১০। তাঁদের দাবি, ২জনের দেহের সন্ধান মিলছে না। আবার গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, পুলিশ যে ৮জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করছে তাঁদের বাইরেও ১০জন নিখোঁজ আছেন। মৃতের প্রকৃত সংখ্যা ১৮ যা পুলিশ(Police) স্বীকার করছে না। অনেক দেহ মঙ্গলবার রাতেই পাচার করে দেওয়া হয়েছে। ওই নিখোঁজ ১০জনের মধ্যে রয়েছেন এক নবদম্পতিও যাদের বাড়ি বীরভূম জেলারই সাঁইথিয়া এলাকায়। স্বজনহারাদের তরফে মিহিরাল শেখ ও বানিরুল শেখ দাবি করেছেন, মঙ্গলবার রাতে বীরভূমের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে ৮টি দেহ সমাধিস্থ করা হয়। তাঁরা পুলিশ থেকে শুরু করে প্রশাসনিক আধিকারিকদের মায় বিধায়ককেও অনুরোধ করেছিলেন তাঁদের হাতে দেহ তুলে দিতে। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। নিয়মানুযায়ী দেহ শনাক্তকরণের সময় নিক্ট আত্মীয়কে থাকতে হবে ও তাঁদের দিয়েই শনাক্ত করাতে হবে। অথচ মঙ্গলবার ওই ৮টি দেহ শনাক্ত করেন আলাউদ্দিন শেখ নামে এক ব্যক্তি। প্রশাসনের দাবি ওই ব্যক্তি মৃতদের আত্মীয়। অথচ স্বজনহারাদের দাবি, ওই নামে তাঁদের কোনও আত্মীয়ই নেই। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে যদি এই দাবি সঠিক হয় তাহলে এই আলাউদ্দিন শেখ কে যার হাতে পুলিশ দেহ তুলে দিয়েছিল এবং যাকে দিয়ে দেহ শনাক্ত করানো হয়েছিল। যে দেহ দমকল আধিকারিকদের বক্তব্য অনুযায়ী ‘পেস্ট’ হয়ে গিয়েছিল, শনাক্তকরণের জায়গায় ছিল না, সেই দেহ কীভাবেই বা শনাক্ত করলেন ওই আলাউদ্দিন? প্রশাসন কেন ডিএনএ টেস্টের জন্য আত্মীয়দের কাছ থেকে নমুণা সংগ্রহ করল না? এইসব প্রশ্নের কিন্তু কোনও উত্ত্র মিলছে না পুলিশ বা প্রশাসনের তরফ থেকে।
একই সঙ্গে স্বজনহারাদের দাবি, গ্রামবাসীদের দাবি, গোটা ঘটনার জন্য দায়ী স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান আনারুল শেখ। সেই ভাদু শেখকে খুন করিয়েছে। তাঁর লোকেরাই গ্রামে আগুন লাগিয়েছে। তাই তাঁর ফাঁসি চাই। ঘটনার সময় মৃতদের স্বজনরা বার বার ফোন করেছিলেন আনারুলকে গ্রামে তাণ্ডব থামাবার জন্য। কিন্তু তা শোনেননি তিনি। পুলিশেরও কোনও সাহায্য পাননি তাঁরা। এমনকি দমকল গ্রামে এলে দমকলকর্মীদেরও আগুন নেভাতে বাধা দেওয়া হয় পুলিশের উপস্থিতিতে। তাই পুলিশের তদন্তে তাঁরা আস্থা রাখছেন না। তাঁরা সিবিআই তদন্ত চান। এদিনই সামনে এসেছে মৃতদের কয়েকজনের পরিচয়। এরা হলেন মিনা বিবি(৪৫), নূরনিহার বিবি(৫৮), রুপালি বিবি(৪০), বানি শেখ(৪০), মিহির শেখ(৩৫) ও নেকলাল শেখ(৪০)। মৃতদের তালিকায় রয়েছে দু’টি শিশুও। স্বভাবতই এইসব দাবির মধ্যে কোন দাবি সঠিক আর কোনটাই বা বেঠিক তা নিয়ে চাপানউতোর বাড়ছে।