নিজস্ব প্রতিনিধি: কেষ্টমামা(Anubrata Mondol) এখন তিহারে(Tihar Jail)। এবার তাঁর সঙ্গে তাঁর মেয়েও। কিন্তু কেষ্টমামা যতদিন বাইরে ছিলেন, তাঁর দাপটে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত। না খেলেই বাজতো ঢাক ‘চড়াম চড়াম’ করে। বাড়ির বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকত ‘খড়গ হাতে উন্নয়ন’। কার্যত তিনিই ছিলেন জেলার প্রথম আর শেষ কথা। তিনিই জেলার মুখ্যমন্ত্রী, তিনিই জেলার প্রধানমন্ত্রী। সেই তিনি নেই তো কী হয়েছে, জেলার উন্নয়ন কী থমকে যাবে! একদম নাহ। কেষ্ট’র অনুপস্থিতিতেই জেলার প্রায় ৫৩ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী(Self Help Group) পেয়ে গিয়েছে ১৪০৫ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ। এই ঋণ পেয়ে স্বনির্ভর হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ মহিলা। ছবিটা কেষ্টগড় বীরভূমের(Birbhum)।
আরও পড়ুন মমতায় মান্যতা কংগ্রেসের, লড়বে ২৫০ আসনে
লালমাটির জেলার প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে বীরভূমের প্রায় ৫২ হাজার ৮০০ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়ার জন্য ১৩৬৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক বছরের শেষ দেখা যায় এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে মোট ১৪০৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে। শুধু তাই নয়, সারা বছরে ঋণ পরিশোধের পরিমাণও প্রায় ৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সফল হচ্ছে। কাঁথা স্টিচ, হাতের কাজ, মাশরুম চাষ, গোটারি, ফিশারি সহ একাধিক কাজে উদ্যোগী হয়েছেন মহিলারা। আর তাঁরা সফলও হচ্ছেন। ঋণ নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর একজন মহিলা নিজেদের উদ্যোগে একক ভাবে বা সমষ্টিগত ভাবে চানাচুর, গাঠিয়া, লাড্ডু, শুকনো মিষ্টি, ডালের বড়ি সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বাজারে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। জেলার বোলপুর, রাজনগর, তাঁতিপাড়া ইত্যাদি এলাকায় অনেকে কাঁথা স্টিচের ব্যবসা করেও লাভের মুখ দেখছেন। অনেক মহিলা এই ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে বাড়িতেই সেলাই মেশিন কিনে সেলাইয়ের কাজ শিখে উপার্জন করছেন। অনেকে আবার মাটি, কাগজ, বাঁশ, বেতের পুতুল, ফুলদানি, ঠাকুরের জামাকাপড় ইত্যাদি তৈরি করছেন। এইসব সামগ্রী তৈরি করে মহিলারা নিজেরাই জেলার বিভিন্ন শহরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাটে বিক্রি করে উপার্জন করছেন।
আরও পড়ুন বেহালা থেকে পার্থকে হটাতে গিয়ে গলা ধাক্কা খেল বামেরা
মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে বছরের প্রথম থেকেই তাঁদের সচেতন করা, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি সেই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কাজ শিখে যাতে মহিলারা নিজেরা সেই সামগ্রী বাজারে বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। বছরের শুরু থেকেই একটা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা যাতে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন কাজ করতে পারেন এবং তাঁরা স্বনির্ভর হতে পারেন সেই লক্ষ্য নিয়েই এই ঋণদান করা হয়। এর জন্য বছরে এক-দু’ বার ঋণমেলারও আয়োজন করা হয়ে থাকে। গত আর্থিক বছরে এই ঋণদানের লক্ষ্যমাত্রা যে শুধুমাত্র পূরণ হয়েছ তাই নয়, গত বছরের মতো এই বছরও ঋণদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে এই জেলা।