নিজস্ব প্রতিনিধি: গরুপাচার(Cattle Smuggling) কাণ্ডে তদন্তে নেমেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই(CBI)। সেই তদন্ত শুরু হয়েছিল আদালতের নির্দেশেই। সিবিআই তদন্তে নেমে বীরভূম(Birbhum) জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের(Anubrata Mondol) দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের বাড়ি থেকে ১০০ কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধার করেছে। সেই সঙ্গে তাঁদের হাতে প্রত্যক্ষ প্রমাণ এসেছ যে গরুপাচার কাণ্ডে সব কিছুই জানতেন অনুব্রত। সেই নিয়েই তাঁকে জেরা করতে চেয়েছিল সিবিআই। কিন্তু ১০ বার ডেকেও ৯ বার হাজিরা দেননি কেষ্ট। তার জেরেই গতকাল সিবিআইয়ের হাতে তাঁর গ্রেফতারি। আর কেষ্ট সিবিআইয়ের হেফাজতে যেতেই লালমাটির জেলা বীরভূমের বুকে রাজনীতির উঠোনে বেশ বড়সড় একটা বদল ঘটে গিয়েছে। কেষ্ট’র দাপটে এতদিন জেলায় কার্যত কুঁকড়ে থাকা বাম(Left) ও বিজেপি(BJP) দুই শিবিরের নেতারাই কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ঘুরে দাঁড়াতে। কেননা পঞ্চায়েতে মাটি দখল হলে তবেই সেই মাটি থেকে ভর দিয়ে লোকসভায় হাই জ্যাম্প দেওয়া যাবে।
অনুব্রত মণ্ডল যতদিন দাপট দেখাতে পেরেছেন ততদিন প্রকাশ্যে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বিরোধী শিবির লক্ষ্য করে। ‘চড়াম চড়াম ঢাক বাজাবো’, ‘বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেব’, ‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে উন্নয়ন’, এসবের সাক্ষী থেকেছে বীরভূম। আর কেষ্ট’র হাত ধরে তৃণমূল গত এক দশকে বীরভূমের মাটি থেকে নিরঙ্কুশ জয়ের মুখ দেখেছে জোড়াফুল শিবির। তা সে লোকসভা হোক কী বিধানসভা, পুরসভা হোক কী পঞ্চায়েত। কেষ্টই হয়ে উঠেছিলেন বীরভূমের প্রথম আর শেষ কথা। এখন যখন সেই কেষ্ট বীরভূম ছাড়া তখন স্বাভাবিক ভাবেই রাতারাতি ছন্দহীন হয়ে পড়েছে লালমাটির দেশের জোড়াফুল শিবির। কেষ্ট যেভাবে দলকে নেতৃত্ব দিতেন জেলায় সেই দাপট কে দেখাবেন, আর সেই নেতৃত্বই বা এখন কে দেবেন সেই প্রশ্ন ঘুরছে বীরভূমের রাজনীতিতে। পাশাপাশি কেষ্ট দেখভাল করতেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম, আউষগ্রাম ও মঙ্গলকোট এলাকা। সেখানেও তিনি তাঁর নিজের বিরোধী হিসাবে কাউকে উঠে আসতে দেননি। তা সে তাঁরা তৃণমূলের নেতানেত্রী হোন কী বিরোধী শিবিরের। কেষ্ট’র দাপতে সবাই ফিউজ হয়ে গিয়েছিলেন।
বীরভূম জেলার রামপুরহাট মহকুমায় ফরওয়ার্ড ব্লক ও কংগ্রেসের একটা ভাল সংগঠন ছিল। বোলপুর মহকুমায় ছিল আরএসপির ভাল সংগঠন। ময়ূরেশ্বরে ছিল বিজেপি ভাল সংগঠন। সেই সঙ্গে জেলাজুড়ে ছিল সিপিআই(এম)’র দাপট। কিন্তু তৃণমূল জমানায় এই সব বিরোধী শিবিরের দাপট ও সংগঠন কেষ্ট নিজ কায়দায় কার্যত ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন। মুরারুই থেকে নানুর, লাভপুর থেকে রাজনগর, সিউড়ি থেকে নলহাটি, খয়রাশোল থেকে ময়ূরেশ্বর, রাজনগর থেকে রামপুরহাট সর্বত্র তৃণমূলের বিজয় কেতান উড়িয়েছেন কেষ্ট বিরোধী শিবিরে ধস নামিয়ে। এখন এই বিরোধী শিবিরই আবার মাথা তুলছে কেষ্ট’র অনুপস্থিতিতে। এমনকি কেষ্ট জমানায় বীরভূমে তৃণমূলের আদি যে সব নেতারা বসে গিয়েছিলেন তাঁরাও এবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠছেন। সকলেরই একটাই আশা কেষ্টহীন বীরভূমের মাটিতে তাঁরা আবার আগের মতোই রাজনীতির উঠোনে বিচরণ করতে পারবেন। বিজেপি ও বামেদের নীচুতলার কর্মী থেকে নেতারা তো এবার রীতিমতো আশাবাদী যে এবার জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা হবে। জেলা পরিষদ হোক কী পঞ্চায়েত সমিতি কোথাও বিরোধী শূণ্য বোর্ড থাকবে না। বিরোধীদের শক্তপোক্ত উপস্থিতি থাকবে বীরভূমের মাটিতে। সেই সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ক্ষমতা দখলের জন্যই বাম-বিজেপির অঘোষিত জোট এখন থেকেই ডানা মেলতে শুরু করে দিয়েছে।