নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলা তথা দেশের গর্ব নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে(Amartya Sen) শান্তিনিকেতনে(Shantiniketan) থাকা তাঁর পৈতৃক বাড়ি ‘প্রতীচী’(Pratichi) থেকে উচ্ছেদের জন্য নতুন করে নোটিস ধরিয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়(Viswa Bharati University) কর্তৃপক্ষ। তাঁকে ১৫ দিনের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নোবেলজয়ী চাইলে আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন। ততদিন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেবে না বলেই নোটিসে জানানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই নোটিস ঘিরে বিশ্বভারতী তথা শান্তিনিকেতনজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এদিকে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, অমর্ত্যের অনুপস্থিতিতে যাতে কোনও ভাবেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ‘প্রতীচী’র দখল নিতে না পারে তার জন্য রাজ্য পুলিশ ও র্যাফ দিয়ে বাড়ি ঘিরে রাখার পরিকল্পনা নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তিনি আগেই অমর্ত্যকে জেড প্লাস সিকিউরিটি দিয়েছেন। এবার সেই নিরাপত্তা এবং বোলপুর মহকুমা আদালতের একটি নির্দেশকে হাতিয়ার করেই এই পদক্ষেপ করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী, এমনটাই জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন ঈদের কলকাতায় বাড়তি নিরাপত্তা, থাকবে সাড়ে ৩ হাজার পুলিশ
দিন দু’য়েক আগেই অবশ্য অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, তিনি জুন মাসে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জমি নিয়ে আলোচনায় বসবেন। চিঠিতে অমর্ত্য আরও জানিয়েছিলেন, ৮০ বছর ধরে জমির চরিত্র একই রয়ে গিয়েছে। নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এই লিজ দেওয়া জমি কেউ দাবি করতে পারেন না। যদিও, সেসবে আমলই দিচ্ছে না বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর(Bidyut Chakrabarty) অনুগত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এবার তো তাঁরা আবার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। অমর্ত্যকে পাঠানো নতুন নোটিসে তাঁরা জানিয়েছে, আগামী ৬ মে’র মধ্যে বিতর্কিত ১৩ ডেসিমেল জমি খালি না করলে দখলদার উচ্ছেদ আইন ১৯৭১ ধারা ৫ এর উপধারা ১এর অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফেরানো হবে ১৩ ডেসিমেল জমি। কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারির পাশাপাশি প্রয়োজনে বল প্রয়োগের মাধ্যমেও জমি খালি করার কথা জানিয়েছে বিশ্বভারতী। ৬ মে’র মধ্যে বিশ্বভারতীর প্লট নম্বর ২০১ উত্তর-পশ্চিম কোণে অর্থাৎ এল আর প্লট নম্বর ১৯০০/২৪৮৭ সুরুল মৌজার ১৯০০ জেএল নম্বর ১০৪ পাবলিক সম্পত্তির উপর অনুমোদিত দখল জমি খালি করার এই নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম কর্মসচিব ও এস্টেট অফিসার।
আরও পড়ুন দেশে বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে ফোনে কথা মমতা –স্ট্যালিনের
জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতীর শুনানিতে ১৯ এপ্রিল বেলা বারোটায় অমর্ত্য সেন অথবা তার প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকার কারণে অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে এহেন কড়া সিদ্ধান্ত এবং হুঁশিয়ারি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। যদিও পারিবারিক ভিটে জমি উত্তরাধিকার সূত্রে অমর্তেরই প্রাপ্য। এ নিয়ে কোনও বিতর্কের অবকাশ নেই। জুনে শান্তিনিকেতন ফিরে আসার পর আলোচনা হতে পারে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ১৭ এপ্রিল এই মর্মে চিঠি পাঠান নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। চিঠি পাঠিয়ে আলোচনার জন্য ৩ মাস সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৩ মাসের বদলে জমি উচ্ছেদের জন্য মাত্র ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এই মুহূর্তে অমর্ত্য সেন বিদেশে থাকলেও জমি পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর বিশ্বভারতীর এই মরিয়া ভাব দেখে এবার পদক্ষেপ করতে পারেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই শান্তিনিকেতন থানার ওসিকে বোলপুরের আদালত নির্দেশ দিয়েছে, প্রতীচী ও তার আশেপাশে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। কার্যত সেই নির্দেশকে হাতিয়ার করেই প্রতীচীর চারপাশে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে এসেও যাতে বিশ্বভারতী প্রতীচীর দখল নিতে না পারে সেই লক্ষ্যেই এবার পদক্ষেপ করা হবে।