নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যবাসীর জন্য বড় সুখবর। লিজে থাকা জমির(Lease Land) বর্তমান বাজারদরের ১৫ শতাংশ টাকা দিলেই মিলবে মালিকানা সত্ত্ব(Ownership)। এবার সেই পদক্ষেপই করতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। সেই লক্ষ্যেই সম্প্রতি বদল আনা হয়েছে ১৯৫৫ সালের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আইনে(Land and Land Reform Act)। সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে লিজে থাকা জমিতে যারা বসবাস করছেন তাঁরা ওই জমির বাজারদরের ১৫ শতাংশ দিলেই মালিকানা সত্ত্ব পেয়ে যাবেন। রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হল। কারণ, এতে শুধু বাস্তু বা বাড়ি নয়, শিল্পের জন্য ব্যবহৃত লিজে নেওয়া জমিরও মালিকানা স্বত্ত্বও মিলবে। অর্থাৎ, পাকাপাকিভাবে মালিক হয়ে যাবেন লিজ প্রাপকরা(Lease Holders)।
আরও পড়ুন গ্রাম ও শহরের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নয়নে ২৮০ কোটির বরাদ্দ
রাজ্যের আইন অনুযায়ী, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লিজ নেওয়ার সময় জমির বাজারদরের ৯৫ শতাংশ টাকা সেলামি দিতে হয়। পরবর্তীতে ভাড়া বাবদ প্রতি বছর জমির মূল্যের ০.৪ শতাংশ হারে টাকা পায় রাজ্য। পাশাপাশি লিজের মেয়াদ শেষে করাতে হয় পুনর্নবীকরণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নয়া সিদ্ধান্তের পর থেকে এই ঝঞ্ঝাট আর পোহাতে হবে না লিজ প্রাপকদের। কারণ, সংশ্লিষ্ট রুল এবং ম্যানুয়ালে সংশোধনী এনে খুব শীঘ্রই জারি করা হবে এই স্বত্ত্ব সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি। শুরু হয়ে যাবে মালিকানা দেওয়ার কাজ। কিন্তু বিষয়টি ঠি কী রকম হতে চলেছে? ধরুন, ৩০ বছর আগে একটি জমির দাম ছিল ১০ লক্ষ টাকা। সেই জমি লিজ নিতে ৯৫ শতাংশ হারে সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা সেলামি দিতে হয়েছিল। বর্তমানে সেই জমির বাজারদর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ধরে নেওয়া যাক, তার দাম এখন ১ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে মালিকানা স্বত্ব পেতে ওই জমির বর্তমান বাজারদরের ১৫ শতাংশ হিসাবে দিতে হবে আরও ১৫ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন SAT’র ৩টি বেঞ্চের ৫টি শূন্যপদ পূরণে উদ্যোগী হল রাজ্য
তবে এক্ষেত্রে একটি শর্তও থাকছে। জমির মালিকানা সত্ত্ব হস্তান্তরিত করার আগে দেখে নেওয়া হবে কী কাজের জন্য সেই জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। কেননা, নিয়ম অনুযায়ী শিল্পের জন্য লিজে দেওয়া জমি অন্য কোনও কাজে লাগানো যায় না। তবে নবান্ন সূত্রের খবর, এই নিয়মেও কিছু বদল আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। আগামী দিনে শিল্পের জন্য লিজে দেওয়া জমির মালিকানা স্বত্ত্ব নিলে, মোট জমির ১০-১৫ শতাংশ অন্যান্য কাজে লাগানোর অনুমতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি কেউ চাইলে কিস্তিতে টাকা মেটাতে পারবেন কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। দু’টি বিষয়ই আগামী দিনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে। তবে আপাতত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, লিজে থাকা জমিগুলিকে ‘কলকাতা খাস মহল’, ‘শিল্পতালুক’, ‘বন্ধ কল কারখানার জমি’ ও ‘অন্যান্য কাজের জন্য লিজে দেওয়া জমি’ সহ ছ’টি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন পথশ্রী ও রাস্তাশ্রী প্রকল্পে ২ মাসে ১৬ লক্ষ কর্মদিবসের সৃষ্টি মমতার বাংলায়
১৯৫৫-৫৬ সালে ল্যান্ড সিলিংয়ের নিয়ম মেনে বহু জমি ‘খাস’ বলে চিহ্নিত হওয়ার সময় ছাড় দেওয়া হয়েছিল মিল, ফ্যাক্টরি বা ওয়ার্কশপকে। পশ্চিমবঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ আইন, ১৯৫৩-এর ৬(৩) ধারা অনুযায়ী সেই ছাড় দেওয়া হয়। বর্তমানে অনেক কলকারখানাই বন্ধ। সেগুলির জমির মালিকানা স্বত্ত্ব পেতে অবশ্য শুধু বর্তমান বাজারদরের ১৫ শতাংশ টাকা দিলে হবে না। দিতে হবে বকেয়া সেলামিও। অন্যদিকে আবার মাত্র ২ শতাংশ হারে ভারি শিল্পের জন্য খাস জমি ইস্যু করা হয়েছিল। সেগুলির মালিকানা স্বত্ত্ব পেতে দিতে হবে বর্তমান বাজারদরের মোট ৭ শতাংশ টাকা।