নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) আর্জি মেনে এদিন চোপড়ায় পা রেখেছেন রাজ্যপাল(Governor of West Bengal) সি ভি আনন্দ বোস। উত্তরবঙ্গের(North Bengal) উত্তর দিনাজপুর(Uttar Dinajpur) জেলার ইসলামপুর মহকুমার(Islampur Sub Division) চোপড়া(Chopra) ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দাসপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চেতনাগাছ এলাকায় মাটি চাপা পড়ে সম্প্রতি ৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী Border Security Force বা BSF’র দিকে। যদিও এই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিজেদের দোষ স্বীকার করতে চাইছে না। রাজ্য সরকারার দাবি, যে এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে তা BSF’র নিয়ন্ত্রীত এলাকা এবং সেখানে ওই কেন্দ্রীয় বাহিনীই একটি হাইড্রেন তৈরি করছিল। সেই মাটি কাটা জায়গাতেই খেলতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে মৃত্যু হয় ৪ শিশুর। তাই BSF-কে এই ঘটনার দায় নিতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। সেই সঙ্গে ঘটনার দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে তৃণমূলের তরফে আর্জি জানানো হয়েছিল রাজ্যপালকে(C V Ananda Bose) গোটা বিষয়টি সরজমিনে খতিয়ে দেখতে।
এদিন রাজ্যপাল চোপড়াতে গিয়ে মৃত শিশুদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ও দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। সন্তানহারা পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সান্তনা দেন রাজ্যপাল। মৃত ৪ শিশুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার আগে এদিন রাজ্যপাল দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। তারপর চার শিশুর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে নিজের মোবাইল নম্বর দেন, যাতে প্রয়োজনে সরাসরি রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলতেন পারেন সন্তানহারা অভিভাবকরা। এর পাশাপাশি সন্তান হারানো ৪ পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যও করেছেন রাজ্যপাল। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন চার শিশুর পরিজন। রাজ্যপাল জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানো হবে। একইসঙ্গে BSF’র সঙ্গেও আলোচনা করবেন। রাজ্যপালকে কাছে পেয়ে BSF’র বিরুদ্ধে এদিন ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি, BSF ঠিকভাবে কাজ করে না। চোপড়ার ঘটনাস্থল থেকে ফেরার পথে রাজ্যপাল যান BSF’র ক্যাম্পে। সেখানে এই দুর্ঘটনা নিয়ে এক প্রস্থ আলোচনা হয় বলেও খবর।
এদিন রাজ্যপালের সফরের আগেই অবশ্য গতকাল এলাকায় গিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য(Chandrima Bhattacharya)। তিনি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে BSF-কেই ঘটনার জন্য কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। এদিন রাজ্যপালের সেই জায়গায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূলের কর্মীরাও হাতে প্ল্যাকার্ড, শরীরে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে BSF’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। প্রশ্ন তোলেন ৪ শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? গতকাল চন্দ্রিমা জানিয়েছিলেন, ৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় BSF-কে জবাবদিহি করতে হবে। গতকাল মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সন্তানহারা মায়েরা। মর্মান্তিক শিশুমৃত্যুর বিচার দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সমবেদনা জানাতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি খোদ মন্ত্রীও। এদিনও সেই মহিলাদের দেখা যায় রাজ্যপালের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। গতকাল চন্দ্রিমা সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছিলেন, ‘খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা। যে রাজ্যে BSF-রা কাজ করেন সেই রাজ্যের কথা আপনাদের ভাবতে হবে। কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের কথা ভাবলে চলবে না। সন্দেশখালিতে যদি জাতীয় মহিলা কমিশন যেতে পারে, তাহলে চোপড়ায় জাতীয় শিশু কমিশনের প্রতিনিধি দল এল না কেন? ঘটনার সমস্ত দায় BSF-কে নিতে হবে। এর দায়ভার BSF-কে নিতে হবে। সীমান্তে খোঁড়া হল, আর BSF কিছুই জানল না, এটা হতে পারে না।’