নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে মালদা(Malda) বিখ্যাত শুধু আমের জন্য নয়, এ বি এ গনি খান চৌধুরীর জেলা বলেও বিখ্যাত। দীর্ঘদিনের কংগ্রেসি জেলা। তবে বাম(Left) জমানায় সেখানে মাঝে মধ্যেই ছড়ি ঘুরিয়েছে লাল ঝান্ডা। কিন্তু কংগ্রেসকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। এমনকি কংগ্রেস(INC) ভেঙে তৃণমূল(TMC) তৈরি হলেও মালদায় দীর্ঘদিন ধরে জমি তৈরি করতে পারেনি জোড়াফুল। জেলার জনতা তৃণমূল অপেক্ষা কংগ্রেসকেই কাছে ধরে রেখাছিলেন। কিন্তু দিল্লির রাজনীতিতে বিজেপির দাপট এবং বাংলার মাটিতে বিজেপির উত্থান এই জেলার সব সমীকরণ বদলে দিয়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলায় বিজেপির(BJP) জয় জেলাবাসীকে বাধ্য করে তৃণমূলকে নিয়ে ভাবতে। যার নিট রেজাল্ট একুশের ভোটে জেলার ১২টি আসনের মধ্যে ৮টিতেই তৃণমূলের জয় এবং জেলা থেকে তো বটেই রাজ্যের বিধানসভা থেকেও বাম-কংগ্রেসের বিদায়। একুশের ভোটের সেই সাফল্যকে আঁকড়ে ধরে ২৪’র ভোটে ঝাঁপিয়েছে তৃণমূল। শনিবার দুপুরে সেই মালদার মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে হারানোর ডাক দেওয়ার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) আবেদন রেখেছেন, ‘এ রাজ্যে কংগ্রেস-সিপিএমকে ১টাও ভোট নয়।’
এদিন মালদা জেলায় মমতার ২টি সভা ছিল। প্রথম সভা ছিল গাজোলে দলের উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে এবং দ্বিতীয় সভা ছিল মানিকচকে দলের দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শাহনাওয়াজ আলি রাইহানের সমর্থনে। সেই দুই সভা থেকেই তিনি বিজেপিকে হারাবার ডাক দিয়েও, বাম-কংগ্রেসকে ভোট না দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মালদা একটা বর্ধিষ্ণু এলাকা। মালদার থেকে শুধু ভোট নিয়ে গিয়েছে। বরকতদাকে শ্রদ্ধা করি। তিনি যতদিন ছিলেন আমাদের আপত্তি ছিল না। লড়াইটা দিল্লির লড়াই। কিন্তু, দিল্লিতে বাংলার মানুষের হয়ে কথা বলার জন্য বিজেপির যারা জিতেছিল, কংগ্রেসের যারা জিতেছিল, তাঁরা কোনওদিন বলেননি। কোনওদিন বাংলার হয়ে কথা বলেছে? শুনেছেন? বাংলার হয়ে দাবি আদায় করেছে? জেনে রাখবেন বাংলায় কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি ভাই ভাই সঙ্ঘ। লড়ছে তাই একসঙ্গে। আমরা লড়ছি আমরা একা বিজেপির সঙ্গে। সিপিএম-কংগ্রেসকে একটাও ভোট দেবেন না। এটা বিজেপির খেলা। ওদের পলিসি হচ্ছে ভোট কাটো কংগ্রেসের নামে যাতে বিজেপির ভোটটা ভাল হয়। ভোট কাটো সিপিএমের নামে যাতে বিজেপির ভোটটা ভাল হয়।’
বিজেপির জয়ের আস্ফালন নিয়ে মমতা বলেন, ‘বিজেপি বলছে ৪০০ পার করবে! কোথায় পাবে এত ভোট? বিজেপি কেরালায় ভোট পাবে না। বিজেপি তামিলনাড়ুতে ভোট পাবে না। গত বার সব ভোট পেয়ে ৩০৩ হয়েছিল। ৪০০ কী করে হবে। ও রকম ওরা বলে। ২০২১ সালে বলেছিল বাংলায় ২০০ পার করবে। ১০০ পার করতে পেরেছিল? ৮০ পার করতে পেরেছিল? যে ৭৭টা পেয়েছিল, তার মধ্যে ১০ জন আমাদের সঙ্গে চলে এসেছিল। এ বারও একই অবস্থা হবে। ৪০০ পার নয়, ওরা পগার পার হবে। ওরা ক্ষমতাতেই আসবে না। এখানে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস ভাই ভাই। এখানে ওদের কাউকে ভোট দেবেন না। কোনও সমীক্ষা বিশ্বাস করবেন না। সব বিজেপি টাকা দিয়ে করিয়েছে। বিধানসভায় ২০০টি ভোট পাবে বলেছিল। পায়নি। এ বারও পাবে না।’ এর পাশাপাশি মমতা এদিন মুখ খুলেছেন দেশে তৈরি হওয়া INDIA জোট নিয়েও।
তিনি বলেন, ‘বাংলায় INDIA জোট নেই। INDIA জোট তৈরি করেছিল কে? আমি করেছিলাম। কিন্তু শুনে রাখুন বাংলায় আমরা একা লড়ছি। দিল্লিতে সরকার গড়ব আমরাই। তখন আমরা INDIA জোটকে সাপোর্ট করব। কংগ্রেস সারা ভারতবর্ষে লড়ুক আমার কোনও আপত্তি নেই, যেখানে আমরা লড়ছি না। আমরা যেখানে লড়ছি সেখানে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। আমাদের এমপি পার্লামেন্টে লড়াই করেছে। মার খেয়েছে। মহুয়াকে বহিষ্কার করে দিয়েছে। তারপরেও মনে রাখবেন একশোদিনের টাকা চাই। গরিব লোকেদের নিয়ে আমাদের এমপিরা গিয়েছিল দিল্লিতে। ওখানে অভিষেকদের মেরেছিল। কিন্তু ওরা মাথা নত করেনি। কংগ্রেস যেখানে যেখানে লড়াই করছে ভাল করে লড়াই করুক, পুরো মদত দেব। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কাটতে আসবে না। এখানে বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস মিলেনিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। বিজেপির মুখের ভাষা জঘন্য আর সিপিএম তো নগণ্য। আর বাম-কংগ্রেস নিজেরা নিজেদের কাছেই বরেণ্য। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তাই মনে রাখবেন, বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছে আর করবে একমাত্র তৃণমূল। এ রাজ্যে একমাত্র তৃণমূলই পারে বিজেপিকে হারাতে। তাই তৃণমূল ছাড়া এ রাজ্যে আর কাউকে একতাও ভোট দেবেন না।’