নিজস্ব প্রতিনিধি: নির্মমতার নজির গড়লেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্ট্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুজোর আগেই নিজের তিন সহযোগীকে কাজ থেকে তাড়ালেন লকেট। পুজোর আগে বিনা নোটিশেই তিনজন পার্সোনাল অ্যাসিস্টান্টকে বরখাস্ত করায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলা বিজেপির অন্দরে। ঠিক কী কারণে এই অপসারণ? উত্তর নেই কারোর কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই তিন জন হলেন এক মহিলা এবং দুই যুবক। যারা কিনা প্রার্থী হওয়ার অনেক আগে থেকেই লকেট চ্যাটার্জীর ছায়াসঙ্গী ছিলেন।
সাংসদের দিল্লির অধিকাংশ কাজ সামলাতেন এয়ারপোর্ট এলাকার বাসিন্দা এক যুবক। হুগলি সংসদীয় এলাকার যাবতীয় কাজের দায়িত্ত্ব ছিল নিউ ব্যারাকপুর এলাকার এক যুবকের উপর। আর ওই মহিলা পিএ মূলত সবসময় সাংসদের সঙ্গেই থাকতেন। সাংসদের হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে এক পিএ জানিয়েছেন, ‘কি হয়েছে কিছুই জানিনা। কলেজ শেষ করেই রাজনীতিতে এসেছি। উনি যখন মহিলা মোর্চার নেত্রী ছিলেন তখন থেকেই সঙ্গে ছিলাম। তারপর লোকসভা নির্বাচনে এক সঙ্গে কাজ করছি। খুব চাপ ছিল, বাড়ি যাওয়ার অবকাশ মিলত না। সামান্য মাইনে পেতাম তবুও অফিসে থেকে রান্না করে খেয়েছি। দিন রাত পরিশ্রম করেছি। নিজের পয়সায় তেল ভোরে বাইক চালিয়ে কাজ করেছি। তার এই প্রতিদান পেলাম।’
তিনি এও জানিয়েছেন, ‘লকডাউনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক কাজ করেছি। তখন কেউ ছিলনা, সবাই সংক্রমণের ভয়ে বাড়িতেই থাকত। আমি একাধিকবার বাজার করা থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাংসদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। তখন তাঁর দাদা সুশান্ত চ্যাটার্জীকেও দেখা যায়নি। হঠাৎ গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সুশান্ত বাবু তৃণমূলে থেকে এসে সাংসদের নির্বাচনী এজেন্ট হয়ে যান। একই ঘটনা ঘটেছিল লোকসভা নির্বাচনের আগেও। তখনও তিনি হঠাৎ-ই এসে নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছিলেন।’ কিন্তু লকেটের দাদা তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত।
নিজের দাদার কথাই উঠতে-বসতে শুনছেন হুগলির সাংসদ লকেট চ্যাটার্জী। তবে লোকসভা নির্বাচনের পর সুশান্ত বাবুকে আর দেখা যায়নি লকেটের সঙ্গে। তবে এবারই ব্যতিক্রম, বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই সুশান্ত বাবুর প্রভাব নজরে পড়তে থাকে। লকেটের বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে আপাতত উত্তরাখন্ডে সংগঠনের দায়িত্বে রয়েছেন, তাই বারবার দিল্লি যেতে হয় লকেটকে। তাই সাংসদের অবর্তমানে তিনিই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন। এমনকি সুশান্ত বাবুর বিরুদ্ধে দলীয় নেতৃত্ত্ব, কর্মী-সমর্থক থেকে সরকারি কর্মী আমলা সকলের সঙ্গেই চরম দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠতে থাকে। তখন তাঁর এই ঔদ্ধত্যকে মেনে নেয়নি অনেকেই। সকলেরই অভিযোগ, অন্যান্য সময় নয়, শুধুমাত্র নির্বাচনের সময়ই কেন আসেন সুশান্ত বাবু। আর এসেই উনি নির্বাচনী এজেন্টও হয়ে যান, আশ্চর্য্য। এই নিয়ে দুবার এই ঘটনা ঘটেছে। ফলে দলীয় কর্মী সমর্থকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আবহ সৃষ্টি হয়।