নিজস্ব প্রতিনিধি: পাহাড় সফরের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) ইঙ্গিত দিয়েছিলেন খুব শীঘ্রই জিটিএ(GTA) বা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনস্ট্রেশনের নির্বাচন করিয়ে নিতে চান তিনি। পাহাড়ে গিয়ে সেই লক্ষ্যেই সেখানকার ছোট বড় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই খোলা মনে আলোচনা সারেন তিনি। সেখানেই তিনি পাহাড়ের সবকটি রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করেন তাঁরা যেন পৃথক গোর্খাল্যান্ড(Gorkhaland) রাজ্যের দাবি ছেড়ে দেন। পরিবর্তে রাজ্যের মধ্যে থেকেই সর্বোচ্চ স্বশাসন তাঁদের দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতিও দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকের পরেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার(GJMM) তরফ থেকে জানানো হয়েছিল তাঁরা পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি ছেড়ে দেবে। কিন্তু সেই ঘোষণের পরেই রীতিমত পাল্টি খেলেন খোদ মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং(Bimal Gurung)। বুধবার পাহাড়ে নারী মোর্চার এক সভায় যোগ দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, জিটির নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হলে তিনি আমরণ অনশন শুরু করবেন।
পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি জিটিএ সহ আরও ৩টি পুরসভার নির্বাচন করাতে চান দ্রুত। সেই লক্ষ্যেই তিনি পাহাড়ের সবকটি রাজনৈতিক দলকে বৈঠকে ডেকেছিলেন। সেখানেই তিনি গোটা বিষয়টি নিয়ে খোলামনে সকলের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেখানে জিটিএ ও পাহাড়ের আরও ৩টি পুরসভার নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনও বিরোধিতা করেননি। মোর্চার তরফ থেকে সেই বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন রোশন গিরি। তিনিও ওই নির্বাচনের প্রস্তাবে কোনও বিরোধিতা করেননি। কিন্তু এখন গুরুং যেভাবে জিটিএ নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত বিরোধী অবস্থান নিলেন ও আমরণ অনশনের কথা ঘোষণা করলেন তার জেরে নতুন করে পাহাড়ে অশান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয় গুরুং হঠাৎ করে এমন রাজ্য সরকার বা তৃণমূল বিরোধী অবস্থান নিলেন তা নিয়েও প্রশ্ন ছড়িয়েছে পাহাড়ের রাজনীতিতে।
গুরুংয়ের এই পাল্টিবাজির পিছনে সব থেকে বড় কারণ হিসাবে যা উঠে আসছে তা হল গুরুংয়ের নিজস্ব রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। কেননা একুশের বিধানসভা নির্বাচন ও দার্জিলিং পুরসভার নির্বাচনে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করেও পাহাড়ের মানুষের সমর্থন পায়নি মোর্চা। তাঁদের কোনও প্রতিনিধিই জয়ের মুখ দেখতে পারেনি। অথচ দার্জিলিং পুরসভায় চমকে দেওয়ার মতো ফল করেছে অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি। তাঁরা কার্যত একক দক্ষতাতেই দার্জিলিং পুরসভার দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়েছে। আসন পেয়েছে অনীত থাপার দক ও তৃণমূলও। কিন্তু ঝুলি খালি থেকে গিয়েছে মোর্চার। কার্যত পাহাড়ের এই রাজনৈতিক ফলই বলে দিচ্ছে সেখানে শুধু যে গুরুংয়ের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে তাই নয়, মোর্চার দিক থেকেও মানুষ মুখ ঘুরিয়েছে। এই অবস্থায় জিটিএ সহ পাহাড়ের ৩ পুরসভায় স্বচ্ছ নির্বাচন হলে সেখানে মোর্চার ফল খারাপ হতে বাধ্য। পাহাড়ে এখনও সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হল জিটিএ। সেই জিটিএ হাতছাড়া হলে পাহাড়ের ক্ষমতা দখলের যাবতীয় খোয়াব ফের গুরুংয়ের হাত থেকে বেড়িয়ে যাবে। সেটা আন্দাজ করেই এখন তিনি ব্যক্তিস্বার্থ সামনে রেখে ফের অশান্তি ও আগুন লাগানোর ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন। যদিও তিনি নিজে জানেন তাঁর কথা এখন পাহাড়ের সবাই শুনবেন না। তাই হরতাল ডাকার বদলে নিজের দিকে পাহাড়ের সহানুভূতি টেনে আনতে আমরণ অনশনের হুমকি দিয়ে রাখলেন। যদিও তাতে কাজের কাজ কতখানি হবে তা নিয়ে খটকা থাকছেই।