নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতার জাকজমকের পাশে কার্যত ঢাকা পড়ে যায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দুর্গাপুজো। কিন্তু এই ঢাকা শহরেই আছে, ৮০০ বছরের বেশি প্রাচীন শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মন্দির। যেখানে কাত্যায়ণী রূপেই পূজিতা হন মেবী মহিষাসুরমর্দিনী। পাশে যথারীতি রয়েছেন লক্ষ্মী, সরস্বতী এবং নিচে কার্তিক ও গণেশ। এবং বাহন রূপে পশুরাজ সিংহও হাজির থাকেন। গর্ভগৃহে মূল বিগ্রহের উচ্চতা দেড় ফুট। কার্যত জন্মলগ্ন থেকেই ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রতি বছর ধুমধামের সঙ্গেই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে।
সময়ের সঙ্গে এই মন্দিরের ইতিহাসও খুব প্রাচীন। এই মন্দির ঘিরে রয়েছে অজস্র জনশ্রুতি। জানা যায়, ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন বাংলার রাজা বল্লাল সেন। কিংবদন্তী যে বল্লাল সেন একবার দেবতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এরপরই তিনি গভীর জঙ্গলে দেবীকে খুঁজে পান এবং একটি মন্দির নির্মাণ করেন। আবার আরেকটি জনশ্রুতি হল, রাজা বিজয় সেনের স্ত্রী স্নান করার জন্য লাঙ্গলবন্দ গিয়েছিলেন। ফিরে আসার সময় তিনি একটি পুত্রকে জন্ম দেন যার নাম বল্লাল সেন। জঙ্গলের মধ্যে তিনিই মূর্তিটি খুঁজে পান এবং এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। মূর্তিটি জঙ্গলের মধ্য়ে ঢাকা বা আচ্ছাদিত অবস্থায় পেয়েছিলেন। তাঁই এই মন্দিরের নাম ঢাকেশ্বরী (ঢাকা+ঈশ্বরী)।
ইতিহাসবিদদের মতে, এই ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকেই শহরের নাম হয়েছে ঢাকা। আরেকটি প্রবাদ মতে, সতীদেহ ছিন্ন হওয়ার পর তার কিরিটের ডাক (উজ্জ্বল গহনার অংশ) এই স্থানে পড়েছিল তাই এটা একটি উপপীঠ। সেই ‘ডাক’ থেকেই ঢাকেশ্বরী নামের উৎপত্তি হয়েছে। যাই হোক মূল মন্দিরটি কালক্রমে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। পরবর্তী সময় বাংলার সুবেদার মানসিংহ জরাজীর্ণ মন্দিরটির সংস্কার করেন। ১৫৯৪-১৬০৬ সময়কালের মধ্যে বর্তমান মন্দিরটি পুনর্নিমান করা হয়। তবে এরপরও বহুবার মন্দিরটি সংস্কার করা হয়েছে।
বাংলার সুবেদার মানসিংহ সেই সময় ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে ৪টি শিবলিঙ্গ স্থাপন করেছিলেন। তবে বর্তমানে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যে বিগ্রহ রয়েছে সেটি মূল বিগ্রহ নয়। ৮০০ বছরের প্রাচীন বিগ্রহটি রয়েছে আমাদের কলকাতায়। দেশভাগের সময় মূল বিগ্রহটি কলকাতার কুমারটুলি অঞ্চলে দুর্গাচরণ স্ট্রিটে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আজও সেটি এখানেই আছে। তবে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আজও ধুমধামের সঙ্গে দুর্গাপুজো হয়। আর স্থানীয় মানুষজন ভিড়ও করেন পুজো দেখতে।