নিজস্ব প্রতিনিধি: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) ১৬১ তম জন্মদিবসে রবীন্দ্রসদনে আয়োজন করা হয়েছিল ‘কবি প্রণাম’ অনুষ্ঠানের। আয়োজন করেছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি’। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (CM) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে তাঁর আক্ষেপ, খোয়া যাওয়া নোবেল পুরস্কার (Nobel Prize) আজও উদ্ধার হল না! তিনি বলেন, তবে নোবেল চুরি যাওয়া মানে রবি ঠাকুরকে হারিয়ে ফেলা নয়। তিনি নোবেল প্রাইজ গেঁথে গিয়েছেন আপামর বাঙালির হৃদয়ে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রবি ঠাকুর সাগরের মত। তাঁর গভীরতা- পরিধি মাপা যায় না। তিনি বিশ্বকে আলোকিত করেছেন। শুষ্ক ম্রুভূমিতে উৎসারিত আলোর ঝর্ণা এনে দিয়েছেন। তিনি না থাকলে বাংলায় নবজাগরণ সম্পূর্ণ হত না। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, বিশ্বকবি আপামর বাঙালির হৃদয়ে মুক্তার মালার মত রেয়েছেন সর্বদা। সকাল থেকে রাত সবসময় বাঙালির জীবনে জড়িয়ে রয়েছেন রবি ঠাকুর। নতুন প্রজন্মের প্রতি মমতা বার্তা, রবি ঠাকুরকে পাথেয় করে চলার।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বারবার উঠে আসে রবি ঠাকুরের নোবেল প্রাইজ চুরি যাওয়ার প্রসঙ্গ। আক্ষেপ করে বলেন, বাম আমলে খোয়া গিয়েছিল নোবেল পুরস্কার। এই কেস সম্ভবত সিবিআই বন্ধ করেছে। নোবেল প্রাইজ চুরি যাওয়া জাতির অসম্মান বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, এই অপমান সহ্য করা যায় না। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নোবেল প্রাইজ চুরি যাওয়া মানেই রবি ঠাকুরকে হারিয়ে ফেলা নয়। তিনি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নোবেল প্রাইজ চুরি গিয়েছে ঠিকই, তবে আপামর মানুষের হৃদয়ে রবি ঠাকুর নোবেল প্রাইজ গেঁথে দিয়েছেন।
আরও বলেন, প্রাণ- গান- সংস্কৃতি- সভ্যতার টানে অতিমারির ভয়াবহ ২ বছর কাটিয়ে সকলে মিলিত হয়ে আবার এই ভাবে আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। এই টানেই পরবর্তী সময়েও সকলে আবার একত্রিত হবে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নাতিদীর্ঘ বক্তব্যে বলেন, বাংলার সাহিত্য- সংস্কৃতি- সভ্যতা বিশ্বের দরবারে কড়া নাড়বেই। এদিন তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে বাংলার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ মর্যাদা দেওয়ার কথাও। ততরুণ প্রজন্মের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, বিভিন্ন দেশের একাধিক ভাষা শিখুক সবাই কিন্তু কেউ যেন না ভুলে যায় বাংলার শেকড়। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে বলেন, মিলনের রাজ্যে বিভেদকামী শক্তি রুখে দেওয়ার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে বলে।
বিশ্বকবি রচিত দেশের জাতীয় সংগীত থেকে বাক্য উদ্ধৃত করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একতার সঙ্গে থাকতে আবেদন জানান। বলেন, বিভেদকে প্রশ্রয় না দেওয়ার কথা। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে, মিলনের বার্তা দিয়ে রবি ঠাকুরের রাখি বন্ধন উৎসব প্রচলনের কথা।
এদিন অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে চাকরি দেওয়া হয় খেলোয়াড় মনোতোষ চাকলাদার এবং দিলীপ ওঁরাওকে। মুখ্যমন্ত্রী কোটায় চাকরি পেয়েছেন ২ কৃতী খেলোয়াড়। এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ও কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিম, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কবি সুবোধ সরকার, কবি শ্রীজাত প্রমুখ। বাংলা আকাদেমির পক্ষ থেকে বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য এদিন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তাঁর ‘কবিতা বিতান’ কাব্যগ্রন্থের জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক হিসেবে তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়। তাঁর হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানে এই প্রথম ঘোষণা করা হল এই পুরস্কারের। এই বারে পুরস্কার পেয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (CM) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা আকাদেমি তাঁর নাম নির্বাচিত করেছে তাঁর লেখা একটি কাব্যগ্রন্থের জন্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল তাঁর লেখা ‘কবিতা বিতান’ কাব্যগ্রন্থের জন্য। চলতি বছরের এই বিভাগে পুরস্কার প্রাপক তিনিই। সারা বছর সমাজের নিরলস কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন যারা, অথচ সাহিত্যে নিমগ্ন, তাঁদের জন্য এই পুরস্কার। জানা গিয়েছে, এই পুরস্কার ত্রি বার্ষিক।
এদিন বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য সম্মানিত হয়েছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার জন্য সম্মানিত হয়েছেন বিকাশ সিংহ। বাংলা ব্যতীত অন্য ভাষায় বাংলা ও বাঙালি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য সম্মানিত হয়েছেন ফ্র্যাসো ভট্টাচার্য।