নিজস্ব প্রতিনিধি: গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ (GTA)-র নির্বাচনী আধিকারিক ঘোষণা করা হল। নির্বাচনী আধিকারিক করা হয়েছে এস পন্নামবলমকে। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক (DM) এস পন্নাবলম। উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে জিটিএ-র কোনও নির্বাচিত বোর্ড নেই। তাই ব্যাহত হয় পাহাড়ের উন্নয়ন। রাজ্য জানিয়েছে দ্রুত জিটিএ এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন (Election) করতে চায় সরকার। তবে বিজেপি সহ কিছু রাজনৈতিক দল এখনই চায় না নির্বাচন। যদিও এতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পাহাড় জুড়ে।
প্রায় ৪ বছরেরও বেশি স্ময় ধরে নেই জিটিএ নির্বাচিত বোর্ড। তাই ব্যাহত হচ্ছে পাহাড়ের উন্নয়ন। রাজ্য সরকার চায় দ্রুত জিটিএ ভোট হোক। জেলা সফরে এসে এই কথা জানিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর অক্টোবর থেকেই জিটিএ ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছিল রাজ্যের নির্বাচন কমিশন। উল্লেখ্য, বিজেপি,জিএনএলএফ,গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সহ বেশ কিছু আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জিটিএ ভোটের বিরোধী। তা নিয়ে অবশ্য ক্ষুব্ধ পাহাড়ের নাগরিকরা। তাঁদের দাবি, গেরুয়া শিবির সহ কিছু রাজনৈতিক দলের জন্যই পাহাড়ে উন্নয়নের জোয়ার ধীর হচ্ছে।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সেখানেই বলা হয়েছে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এস পন্নামবলমকে জিটিএ-র নির্বাচনি আধিকারিক করা হল। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহের দিতে হতে পারে জিটিএ ভোট।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পাহাড় সফরে গিয়ে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী (CM) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিংয়ের মাটিতে দাঁড়িয়েই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, খুব শীঘ্রই তিনি জিটিএ ও পাহাড়ের আরও ৩টি পুরসভার ভোট করিয়ে নিতে চান। সেই নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে হয় এবং তাতে যাতে পাহাড়ের সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে তার জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে যোগ দিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফে রোশন গিরি জানিয়েছিলেন, তাঁরা পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি থেকে সরে আসছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে থাকাকালীন সময়েই মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং জানিয়েছিলেন, জিটিএ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হলে তিনি আমরণ অনশন শুরু করবেন। শুধু তাই নয়, তিনি এক বেসরকারি সংস্থার নামে এক কনভেনশনও ডেকেছিলেন পাহাড়ের পৃথক রাজ্যের বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে। সেই কনভেনশানে আমন্ত্রণ জানানো হয় দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাকেও। সাংসদ নিজেই সে কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন ওই কনভেনশনে যোগ দেবেন তিনি। কনভেনশন শুরু হয়েছিল ঠিকই তবে সেই কনভেনশনে নিজেই যোগ দেননি গুরুং। আসেননি বিস্তাও। উল্লেখ্য, তাঁর ‘অবাস্তব’ দাবি ঘিরে পরিকল্পনায় সায় দেয়নি পাহাড়ের তেমন কোনও রাজনৈতিক দলই। বরঞ্চ তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো রাজ্যের মধ্যে থেকেই অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন স্বশাসিত বোর্ডের দিকেই তাঁদের সমর্থনের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে জিটিএ ও পাহাড়ের আরও ৩ পুরসভার ভোট করানোর দিকেও তাঁদের সায় রয়েছে। তাই গুরুং তাঁর নিজের মতো করে হাঁটতে গিয়ে পথে একলা হয়ে পড়েছিলেন।
গুরুং জানিয়েছিলেন, তাঁরা রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন কিন্তু জিটিএ নির্বাচন হোক তিনি চাইছেন না। যদিও তৃণমূলের সঙ্গে থাকা পাহাড়ের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই চায় জিটিএ নির্বাচন হোক। একমাত্র গোঁ ধরেছিলেন গুরুং। তবে সম্প্রতি বিজেপির ‘উস্কানি’তে ডাকা কনভেনশনে তাঁর অনুপস্থিত থাকার ঘটনার প্রেক্ষিতে মনে করা হয়েছিল, ‘একগুঁয়েমি’ থেকে সরেছেন গুরুং। শুধু তাই নয়, বিজেপির সঙ্গেও রাখতে চাইছে দূরত্ব। সম্প্রতি পাহাড় থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কলকাতায় ফিরে আসার একদিন পরেই ছিল কালিম্পংয়ের বুকে ওই কনভেনশন। আর সেখানেই অনুপস্থিত ছিলেন গুরুং। সুর বদলে তবে কি ‘দিল্লির লাড্ডু’ না খেয়ে পুরোপুরি মুখ্যমন্ত্রীর কথায় সায় দিয়েছিলেন গুরুং?