নিজস্ব প্রতিনিধি: হলদিয়া (HALDIA) শুভেন্দু অধিকারীর (SUVENDU ADHIKARY) খাসতালুক বলেই পরিচিত। সেই খাসতালুকেই বিরাট সভা করল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন। আইএনটিটিইউসি (INTTUC)-র সভায় জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মত। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ABHISHEK BANERJEE) সভার শুরুতেই ঘোষণা করলেন, এই সমাবেশ দলের শ্রেষ্ঠ ট্রেড ইউনিয়ন সমাবেশ। বলেন, গত শুক্রবারের সভাও আক্ষরিক অর্থেই প্রমাণ করে দিয়েছে হলদিয়ায় স্বাধীনতা দিবস। এদিন তাঁর নিশানায় ছিলেন বিরোধী দলনেতা থেকে বিজেপি। সেই সঙ্গে তিনি বার্তা দেন ঠিকাদার থেকে ‘দাদার অনুগামী’দের। ঠিকাদারদের উদ্দেশ্যে দেন কড়া বার্তা।
শনিবারের সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কে অনুগামী সেজে দলের বারোটা বাজাচ্ছে, তা তিনি বেশ জানেন। সবকিছুর তালিকা রয়েছে। বলেন বিজেপির পতাকা তুলে তৃণমূল করা যাবে না। সভায় আসার পথে এই ধরণের ৪-৫ জনকে তিনি চিহ্নিত করেছেন বলেও স্পষ্ট করে বলেন।
এদিন তিনি শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে বলেন, ২০১৯ সালের ১৪ মে যাঁর নেতৃত্বে উত্তর কলকাতায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছে, তাঁর পদলেহন করছে ইডি (ED)- সিবিআই থেকে বাঁচতে। কটাক্ষ করে বলেন, ইনি নিজেকে পূর্ব মেদিনীপুরের সর্বেসর্বা ভাবতেন। অভিষেক দাবি করেন, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভাতেও ‘অনুগামী’ চর ঢুকেছে বলে।
বলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাত থেকে বাঁচতে মেদিনীপুর থেকে দিল্লির কাছে বিক্রি করছে সর্বেসর্বা ভাবা ব্যক্তি। তারপরেই বলেন, মেদিনীপুর বিপ্লবের মাটি। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে নন্দীগ্রাম- নেতাইয়ের মাটি কখনও মাথা নিচু করবে না, মেরুদন্ড বিক্রি করবেন না।
এরপরেই বলেন, সিবিআই তাঁকে তদন্তের জন্য দিল্লিতে ডাকবে কেন? বাংলায় ডাকলে তিনি অবশ্যই যাবেন বলেও দাবি করেন। আরও বলেন, দিল্লিতে তাঁকে ডেকে ২ বার মাথা নিচু করানো হয়েছে। বিজেপি (BJP) থেকে ২ জন তৃণমূলে যোগ দিয়েছে, এতে তাঁদেরও মাথা নিচু করে হয়েছে ২ বার।
বলেন, আগের মাসে অতিরিক্ত সময় কাজ করে যিনি ৬৮ হাজার টাকা পেয়েছেন, পরের মাসে একই কাজ করে তিনি পেয়েছেন ২৫ হাজার টাকা। এরপরেই কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ১২ ঘন্টার কাজ করিয়ে ৮ ঘন্টার টাকা দেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত ৪ ঘন্টা টাকা দিতে হবে। তার হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেসে মামলা করবেন বলেও দাবি করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্থানীয়দের কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন অভিষেক। বলেন, উদ্বাস্তুদের পাট্টা দেওয়া হবে। তার জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। এদিন ঠিকাদারদের হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বলেন, যাঁরা শ্রমিকদের টাকা কেটে ওপরে পাঠাচ্ছেন, তাঁরা সাবধান হয়ে যান। কোনও দাদার ছত্রছায়ায় থেকে কিছু হবে না। নেত্রী একজনই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, কন্ট্রাক্টরি করে তৃণমূল (TMC) করা যাবে না। দল করতে হলে আগে ঠিকাদারের পোশাক খুলে রাখতে হবে। এরপরেই ৩ মাস থেকে ১০০ দিন সময় চেয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হলদিয়ায় কোনও ঠিকাদার নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন মানে কেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি হওয়া। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাযোগ রাখা নয়।
এরপরেই বলেন, বলতে খারাপ লাগে তবু বিচার ব্যবস্থায় ১-২ জন তল্পিবাহক আছেন। যাঁরা কিছু হলেই সিবিআই (CBI)- তদন্তের রায় দেন। ফুলের ঘটনাতেও সিবিআই। এরপরেই বলেন, এটা বলার জন্য তাঁকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হলেও, তিনি বারবার সত্যি কথা বলবেন।
হলদিয়া পুরসভায় ডেভলপমেন্ট ট্যাক্স নিয়েও সরব হন তিনি। বলেন, কোনও কর্পোরেশন বা মিউনিসিপালিটিতে এই কর নেই। এরপরই প্রশ্ন করেন তাহলে এখানে কেন থাকবে? সমস্ত বেআইনি কাজের অডিট হবে বলেও কড়া হুঁশিয়ারি দেন অভিষেক। শ্রমিক সংগঠন ও নেতাদের রাস্তায় নামার বার্তা দেন তিনি।
দলে পুরানো কর্মীদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, যাঁরা সিপিএম থেকে তৃণমূলে এসে পাঁচিলে বসে জল মেপে ভাবছেন, কোন দলের হাওয়া বেশি তাঁরা বসে থাকুন। প্রথম থেকে যাঁরা তৃণমূলের পতাকা ধরে রাস্তায় নেমেছেন, যাঁরা দলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের (MAMATA BANERJEE) নামে প্রথম থেকে স্লোগান দিয়েছেন, তাঁরাই আগে থাকবেন।
রান্নার গ্যাস, পেট্রোল- ডিজেল থেকে সরষের তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিজেপি চালিত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন অভিষেক। তারপর দলে বড় নেতা- বিধায়ক- সাংসদ টানা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে তিনি দরজা খুললে উল্টো দিকের দল উঠে যাবে।
সিওডি গঠনে ২০ শতাংশ শ্রমিক লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। থাকবেনা কোন ঠিকাদার। চাটার্ড অব ভিশনে এই প্রস্তাবই থাকবে বলে দাবি করেন তিনি। সেইসঙ্গে শ্রমিকদের স্বার্থে বলেন, পিএফ- ইএসআই দিতে হবে। শ্রমিকদের ওপর কন্ট্রাকটররা ছড়ি ঘোরাতে পারবেন না। আর তা করলে পালানোর পথ পাওয়া যাবে না।
এদিন তিনি শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে বারবার সরব হয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে। শুভেন্দু ঘরে অভিষেকের সভায় শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হল দাপটের সঙ্গে। শ্রমিকদের সমস্যা শুনে তা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।