নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি সাংবাদিক নন, তিনি জেলা পুলিশ সুপার (SP)। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপারের তবু ইচ্ছে সাংবাদিকতার শিক্ষা দেওয়ার। তিনি সাংবাদিকদের শিখিয়ে দিতে চান কী ভাবে করা হবে খবর। গত ২৭ মে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে একটি সংবাদপত্রের কাটিং মুঠোর মধ্যে নিয়ে দলা পাকিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেখালেন ‘ক্ষমতা’। বললেন, ‘মান’ আরও উন্নত করার কথা। শুধু তাই নয়, ‘চা- পান দোকানে বসে’ সাংবাদিকরা, তাতেও তাঁর গলায় ঝরে পড়েছিল বিদ্রূপের সুর। সাংবাদিক সম্মেলন করে কার্যত সাংবাদিকদের অপমান করেছিলেন এসপি দীনেশ কুমার। আর তাঁর এই ব্যবহারের তীব্র নিন্দা করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সাংবাদিকরা জোট বেঁধে চিঠি দিতে চলেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সাংবাদিকরা (JOURNALIST) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে লেখা সেই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হচ্ছে জেলাশাসক, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) এবং রাজ্য অ্যাক্রেডিয়েশন কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে।
মুখ্যমন্ত্রীর (CM) উদ্দেশ্যে সেই চিঠিতে লেখা রয়েছে, এসপির এই ‘প্রচ্ছন্ন হুমকি’র পর সাংবাদিকরা আতঙ্কিত। শুধু তাই নয়, জেলার সাংবাদিকদের ক্রমাগত অপমান করছে বলেও অভিযোগ। একটি সংবাদ তাঁর ‘মনের মত’ না হওয়ায় সাংবাদিক সম্মেলন (PRESS MEET) ডেকে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তারপরেই বলেছেন ‘নিয়মিত নজরদারি’ চালানো হবে সাংবাদিকদের ওপর। মান এবং দক্ষতা নিয়েও তোলা হয়েছে প্রশ্ন। ওই চিঠিতেই সাংবাদিকরা লিখেছেন, খবরে ভুল তথ্য সত্যিই থাকলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তাঁর বদলে সাংবাদিকদের ডেকে এই আচরণ কেন? মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। তিনিই এই রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী।
অভিযোগ, এক সাংবাদিকের বাড়িতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এখন প্রশ্ন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের জন্য সরাসরি সাংবাদিককে নোটিশ পাঠানো যায় আদৌ, না কি চিঠি দিতে হয় সংবাদমাধ্যমকে? এই ক্ষেত্রে বলার ‘প্রেস রিজয়েন্ডার’ কী, তা জানা উচিৎ পুলিশ সুপারের। উঠেছে এমন প্রশ্নও। জেলা জুড়ে সাংবাদিকরা সমাজ মাধ্যমেও জানিয়েছে প্রতিবাদ। সেই সঙ্গে জেলার সাংবাদিকদের ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ জুড়ে কারও ছবির জায়গায় প্রতিবাদ জানিয়ে শুধুই কালো বা কেউ লিখেছেন, ‘আমরা গর্বিত চা- পান দোকানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে আমরা খোবোড় লিখি। আমাদের নিউজ রুম না থাক, আমাদের সঙ্গে আপনারা, সাধারণ মানুষ আছেন’। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সাংবাদিকদের এই প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়েছেন রাজ্যের রাজধানীর সাংবাদিকরাও। পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের অন্যান্য জেলার সাংবাদিক।
সোমবার দুপুরে তৈরি এই চিঠি পাঠানো হবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। আবেদন- দাবি জানানো হয়েছে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।