নিজস্ব প্রতিনিধি, রূপপুর: পেটের তাগিদে দেশ ছেড়ে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অস্থায়ী আস্তানা গেড়েছেন ওরা। কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে ওদের দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী লড়াইয়ে মেতে উঠেছে। কিন্তু সেই যুদ্ধের আঁচ ওদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং আগের মতোই হাসিমুখে কাঁধে-কাঁধ দিয়ে নিজেদের কাজ করে চলেছেন। ওরা মানে রুশ আর ইউক্রেনের শ্রমিক-কর্মচারিরা। আর এমন অভিনব দৃশ্য-ই চোখে পড়ল পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মীয়মাণ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্ব রয়েছে রুশ সংস্থা রাশিয়ান পারমাণবিক করপোরেশন বা রোসাটম। প্রকল্পটিতে বর্তমানে কাজ করছেন প্রায় ২৫ হাজার কর্মী। তার মধ্যে বিদেশি শ্রমিক-আধিকারিকের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪০০। বিদেশিদের মধ্যে অধিকাংশ রাশিয়ার হলেও ইউক্রেনেরও ২১০ জন নাগরিক রয়েছেন। আগের মতোই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার কাজে আত্মমগ্ন রুশ ও ইউক্রেনের নাগরিকরা। তবে শরীর বাংলাদেশে থাকলেও ইউক্রেনীয়দের মন পড়ে রয়েছে দেশে। এক ইউক্রেনীয় আধিকারিক উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন, ‘যে যুদ্ধ চলছে যা প্রত্যাশিত ছিলনা। সেখানে আমার পরিবারের লোকজন কেমন আছেন, কীভাবে তাদের অনিশ্চিত জীবন কাটছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।’ আর এক ইউক্রেনীয় শ্রমিকের কথায়, ‘এখানে কাজ করছি বটে কিন্তু মন পড়ে রয়েছে দেশে। প্রতি মুহুর্তে খবরের দিকে নজর রাখছি। আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে চলেছি, অবিলম্বে যেন এই লড়াই বন্ধ হয়। কেননা, যতদিন লড়াই চলবে, ততদিন মানসিকভাবে শান্তিতে কাজ করতে পারব না।’
রুশ সংস্থা রোসাটমের এক আধিকারিক কথায়-কথায় বললেন, ‘যুদ্ধের কোনও প্রভাব এখানে পড়েনি। দুই দেশের নাগরিকরাই কাজের প্রতি যথেষ্ট দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতা শেষ পর্যন্ত তাঁরা দেখিয়ে যাবেন বলে আশা করছি।’ রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব যাতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে না পড়ে তার জন্য সতর্ক স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ আধিকারিকরা। ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব যাতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজে না পড়ে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।’