নিজস্ব প্রতিনিধি, বগুড়া: করোনার কালবেলায় চরম বিপদে পড়েছিলেন বগুড়ার আলমগীর কবীর। প্রাইভেট টিউশনি করে দু’বেলা অন্নের সংস্থান করেছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে সব টিউশনি খুইয়েছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করা আলমগীর শেষ পর্যন্ত সব লাজলজ্জা শিঁকেয় তুলে বগুড়ার জহুরুল নগরের বিভিন্ন বাড়ির দেওয়ালে পোস্টার সাঁটিয়েছিলেন, ‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’। তাঁর সেই করুণ আর্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছিল। শেষ পর্যন্ত বুধবার ভাতের দুঃখ ঘুচল আলমগীরের। বগুড়ার স্বপ্ন সুপার শপের আউটলেটে তাঁর জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।
পুলিশের তলব পেয়ে এদিন বেলা বারোটা নাগাদ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান আলমগীর কবির। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। কেন এই ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়েছে তা আলমগীরের কাছে জানতে চান তিনি। পারিবারিক দুরবস্থার কথা জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি না পাওয়ায় মানসিক অবসাদে ভুগছেন বলে অকপটে স্বীকার করেন আলমগীর। সব কথা শুনে একটি সুপার শপে চাকরির ব্যবস্থা করার কথা জানান পুলিশ সুপার। পরে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে আলমগীরের হাতে রিটেল চেইন শপ ‘স্বপ্ন’ এর ‘রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট’ পদের নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি দেশের এক বিখ্যাত দৈনিক সংবাদপত্রে আলমগীর কবীরের করুণ গল্প নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চার বছর চাকরির খোঁজে ২০১৮ সালে ঢাকার সাভারে এসেছিলেন বগুড়ার আলমগীর। বন্ধুর মেসে আস্তানা গেড়েছিলেন। বন্ধুর খাবারই ভাগাভাগি করে খেতেন। একটি পোশাক উৎপাদনকারী সংস্থায় বন্ধু চাকরি পাওয়ার পরে বিপদে পড়েন আলমগীর। তখন সকালের প্রাতঃরাশের বিনিময়ে রাস্তার পাশের এক ফুচকার দোকানে কাজ নেন। ঢাকার জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বগুড়ায় ফিরে গিয়ে টিউশনি শুরু করেন।
ভালই চলছিল জীবন। কিন্তু আচমকা ছন্দপতন। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পরে একটি বাদে সব টিউশনি হারাতে হয় আলমগীরকে। শেষ পর্যন্ত দুবেলা পেটের ভাত জোগাড় করতে একটি বিজ্ঞাপন দেন তিনি। বগুড়া শহরের জহুরুল নগর এলাকায় দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো সেই ফটোকপির বিজ্ঞাপনে লেখা, ‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’। আলমগীরের এক পরিচিত ওই বিজ্ঞাপন ফেসবুকে পোস্ট করেন। দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাড়া ফেলে দেয়। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও আলমগীরকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে অস্বস্তি পড়ে সরকার। শেষ পর্যন্ত এদিন আলমগীরের ভাতের অভাব দূর করতে এগিয়ে আসেন খোদ পুলিশ সুপার।