নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে, বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে’। প্রেমিকের মারে গুরুতর আহত সেই সিংহী আর নেই। চলে গেল চোখের জল ফেলতে ফেলতে আর অভিমান ও অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে।
একাধিক মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না প্রেমিকাকে। অভিমানী নদী ফেলে রেফে গেল একরাশ অভিমান ও দীর্ঘশ্বাস। মন খারাপ বাংলাদেশের কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজের বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সকলের। ১৩ বছরের নদী চলে যাওয়ায় প্রেমিক সিংহের চোখ থেকে ঝরছে জল। আর হৃদয় বিদীর্ণ চিৎকারে মনখারাপ সাফারি পার্কের। ২২ এপ্রিল শুক্রবার ভোরবেলায় মৃত্যু হল জখম সিংহীর। ১৯ ফেব্রুয়ারি সঙ্গী সম্রাটের কামড়ে গুরুতর আহত হয়েছিল সে। মৃত্যু সংবাদ জানিয়েছেন পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মহম্মদ মাজহারুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, সঙ্গমরত অবস্থায় বচসা আর তা থেকেই শুরু হয়েছিল মারামারি, কামড়াকামড়ি। পারস্পরিক আক্রমণে আহত হয়েছিল সিংহ সম্রাট ও সিংহী নদী। প্রেমিকা পাঞ্জা লড়ছিল মৃত্যুর সঙ্গে। দুজনের চোখেই ছিল জল আর একরাশ অনুশোচনা। বেশ চলছিল এতদিনের প্রেম। হঠাৎ মনোমালিন্য। আর তার পরিণাম এমন বেদনাদায়ক। সম্রাট- নদীর আনন্দের জীবন বদলে গিয়েছিল মুহূর্তে। তাও আবার সঙ্গমের সময়।
ঘটনা বাংলাদেশের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের। এখানেই সিংহ বেষ্টনীতে ঘর বেঁধে একসঙ্গে সারাজীবন থাকার স্বপ্ন দেখেছিল প্রেমিক- প্রেমিকা। কিন্তু নিজেদের অভিমান ক্রমে হয়ে উঠেছিল রাগ। আর তা থেকেই নদী আক্রমণ করে সম্রাটকে। পাল্টা সম্রাট চড়াও হয়েছিল নদীর ওপর। নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে গিয়ে প্রেমিকার মারে জখম প্রেমিক। আর প্রেমিকের পাল্টা মারে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিল প্রেমিকা। তারা মানুষ নয় তবুও যে কেন মানুষের মত উন্মাদ হয়ে উঠেছিল কে জানে!
পুরুষ সিংহের নাম সম্রাট আর মহিলা সিংহীর নাম নদী। তাদের মারামারি আর তার পরিণতিতে মনখারাপ সাফারি পার্কের। কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, হঠাৎ মিলনের সময় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল সম্রাট ও নদী। কামড়ের পর কামড় দিয়েছিল একে অপরকে। দুজনেই গুরুতর জখম হয়েছিল। এরপর কর্তৃপক্ষ খবর দিয়েছিল সাফারি পার্কের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসককে। চলেওছিল চিকিৎসা। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকে সম্রাট। অন্যদিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে হতে আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছিল নদীর অবস্থা। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছিল প্রতি মুহূর্তে। সাফারি পার্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্চের শেষ কয়েকদিন থেকে খাওয়া- দাওয়া প্রায় বন্ধ করেছিল নদী। মুখ থেকে অনবরত ঝরছিল লালা, বেরিয়ে আসছিল জিভ। আর গলার জখম অংশ থেকে গড়িয়ে পড়ছিল রস। দিন দিন জীর্ণ থেকে আরও জীর্ণ হয়ে পড়তে শুরু করেছিল। আরও জানা গিয়েছে, সম্রাট ও নদীকে প্রথমে ভার্চুয়ালি চিকিৎসা করছিলেন এক ডাক্তার। তিনি ভিডিওকলে বা ছবি দেখে বলে দিতেন কী করতে হবে। বাকি কাজ করতেন কর্মীরা। পরে দুজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৪ চিকিৎসকের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড। তারপর গঠিত হয়েছিল আরও একটি মেডিক্যাল বোর্ড।
দুই প্রেমিক প্রেমিকার চোখেই জমেছিল। ওরা হয়ত ভেবেছিল, সুস্থ হয়ে উঠলে প্রেমিক-প্রেমিকা নিজেদের আক্রমণ করবে না। উন্মাদ হয়ে উঠবে না মানুষের মত।