নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাক্তন নিরাপত্তারক্ষী তথা প্রাক্তন সেনা আধিকারিক অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে দুই পুলিশ আধিকারিক প্রদীপ দাস ও লিয়াকত আলিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে আদালত। সোমবার বহুল আলোচিত মামলার রায় দিতে এই সাজার কথা ঘোষণা করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। বাকি অভিযুক্তদের মধ্যে ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। আটজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত দলের সদস্যও ছিলেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া রাশেদ ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর জন্য প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তাঁর সহকারী ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডকে চাপা দিতে প্রথম থেকেই সক্রিয় হয় টেকনাফ থানার পুলিশ। প্রাক্তন সেনা আধিকারিককে খুনের পরে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত যে মামলা দায়ের করেছিলেন তাতে উল্লেখ করা হয়, নিহত সিনহা নিজেকে প্রাক্তন সেনা আধিকারিক হিসেবে পরিচ দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’ ও পরে সঙ্গে থাকা পিস্তল উঁচিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ আধিকারিকদের হুমকি দেন।
কিন্তু পুলিশের সেই দাবি না মেনে সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস টেকনাফ থানার প্রাক্তন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রাক্তন আইসি লিয়াকত আলী সহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ৫ অগস্ট কক্সবাজার জেলা ও দায়রা আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিচারক এ বিষয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তদন্ত শেষে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর চার্জশিট প্রদান করেন।
২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্যজ গঠনের আদেশ দেয়। ২৩ অগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্যদান করেন। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।
মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরিস্থিতি সামলাতে কক্সবাজারে ছুটে যান তৎকালীন সেনাপ্রধান ও পুলিশের মহানির্দেশক। চাপে পড়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘোষণা করেন, প্রাক্তন সেনা আধিকারিক সিনহার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে রেয়াত করা হবে হবে না।