নিজস্ব প্রতিনিধি: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ফুট উঁচুতে মা কালীর মন্দির। ১০৮টি সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয় মন্দির চত্বরে। শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং বা দার্জিলিং যাওয়ার পথে কেউ এই মন্দিরে প্রনাম ঠুকে যাননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। হ্যাঁ আমরা কথা বলছি সেবকেশ্বরী কালী মন্দিরের প্রসঙ্গে। সমস্ত পাহাড়বাসী বিশ্বাস করেন, যখন গোটা পাহাড় ঘুমিয়ে পড়ে, পাহাড়-জঙ্গল সহ জনপদ নিঝুম হয়ে যায় তখন একমাত্র জেগে থাকেন সেবকেশ্বরী মা। যেন এই শৈল এলাকার একমাত্র অতন্দ্র প্রহরী তিনি। বোঝাই যাচ্ছে, স্থানীয়দের মধ্যে এই কালী মন্দির ও মা সেবকেশ্বরীকে ঘিরে কতটা শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভয় মিশে রয়েছে। প্রতি বছরই কালীপুজোর দিন হাজার হাডার ভক্তের সমাগম হয় সেবকের এই মন্দিরে। তবে গত বছর থেকে ভক্ত সমাগমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এবছরও পুজো হবে, তবে ভক্তদের প্রবেশ নিষেধ। তবুও মানুষ পাহাড়ের নীচে জড়ো হন, দূর থেকেই ভক্তিভরে প্রনাম করে যান মায়ের উদ্দেশ্যে।
ঠিক রাত ১০.৩৩ মিনিটে পুজো শুরু হয় সেবকেশ্বরী কালীমন্দিরে। এই মন্দিরে কালীপুজোর দিন গেলে বুঝতে পারবেন পাহাড়-সমতল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় মায়ের চরণে। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়ং হোক বা সমতলের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি থেকে ভক্তরা আসেন পুজো দিতে। এই তালিকায় চক্রবর্তী, মুখোপাধ্য়ায় বা দাস, সরকার যেমন থাকেন তেমনই তামাং, গুরুং, সুব্বা বা রাই পদবীর মানুষজনও হাজির হন অঞ্জলি বা মানতের পাঁঠা নিয়ে। এমনকি নেপাল থেকেও পূণ্যার্থীরা চলে আসেন কালীপুজোর সময়।
১৯৫২ সালে বর্তমান মন্দিরটি তৈরি হয় সেবকেশ্বরী মায়ের। তবে মূল মন্দির এবং মূর্তি কবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে সে ব্যাপারে কোনও তথ্য নেই। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, বহুকাল আগে কেন্দ্রীয় এক অফিসার তিস্তার জল মাপার কাজ কাজ করতে গিয়ে মায়ের আদল দেখতে পান একটি পাথরে। সেই পাথরই পূজিত হয় মা সেবকেশ্বরী। তবে এখন নতুন একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, পাশেই রাখা হয়েছে ওই পাথরটি। মূল পুজোয় অবশ্য চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। যদিও কোনও কোনও বছর কয়েকশো পাঁঠা বা ছাগ বলি হয় মানতের। মন্দিরে রয়েছে একটি পঞ্চমুন্ডির আসন। জানা যায় সেই আসন স্বপ্নে-পাওয়া। নীরেন্দ্রনাথ সান্যাল নামে এক ব্যক্তি বহুদিন আগে স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেই তিনি বর্তমান বেদির কাছে এসে দেখেন একটি আলাদা বেদি করা আছে। তার সামনে একটি ত্রিশূল এবং জবাফুল এবং একটা বেলপাতা পড়ে রয়েছে। সেখানেই তিনি তিস্তায় পাওয়া সেই মায়ের আদলের পাথরটি প্রতিষ্ঠা করেন। সময়টা মোটামুটি ১০৫০ সাল। এরপর ১০৭২ সালে বর্তমান মন্দির নির্মান হয়।