নিজস্ব প্রতিনিধি: মহানবমী তিথি। মন খারাপ হিমালয় স্ত্রী মেনকার। কাঁদতে কাঁদতে বলছেন,
‘ওরে নবমী নিশি হৈল অবসান গো/ শুনেছি দারুণ তুমি না রাখ সতের মান’।
নবমী মানেই বাঙালির মনে বাজে বিষাদের সুর। ঘরের মেয়ে যে পাড়ি দেবে কৈলাসে। মহানবমী’র দিন অনেকে বেগুনি রঙের পোশাক পরেন। জেনে নিন, এই দিনের খুঁটিনাটি।
নবরাত্রির শেষ দিন নবমী। এই দিন দেবী পূজিতা হন সিদ্ধিদাত্রী রূপে। পুরাণ অনুযায়ী, দেবী’র আরাধনা করেছিলেন মহাদেব। তারপরেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তিনি। এই দিন পুজোর বিশেষ অঙ্গ হোম। হয় মহানবমী কল্পারম্ভ, মহানবমী বিহিত এবং নবরাত্রি ব্রত সমাপন। নবমীই দুর্গা ও অসুরের যুদ্ধের শেষ দিন। আর নবমী তিথি পেরানো মানেই পড়ে যায় দশমী তিথি।
নবমী’র (NAVAMI) দিন শ্রী রামচন্দ্র দেবী দুর্গার (DURGA) আশির্বাদ এবং শক্তি নিয়ে বধ করেছিলেন রাবণকে। অনেকে এই দিনে কুমারী পুজোও করেন। ১ থেকে ১৬ বছরের কন্যাদের কুমারীপুজো করা হয়ে থাকে। শাস্ত্রে আছে, কোলাসুর যখন স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল জুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে তখন দেব ও ঋষিকুল দেবী কালী’র শরণাপন্ন হয়েছিলেন। দেবী কুমারী রূপ ধারণ করে বধ করেছিলেন অসুরকে। সেই কারণেই কুমারী পুজো। প্রাচীনকাল থেকে প্রকৃতিকে ‘মা’ মনে করা হয়। উপাসনা করা হত প্রকৃতির। বিশ্বাস, প্রকৃতিই মহামায়া। তাই কুমারীকে দেবী জ্ঞানে আরাধনা করা হয়। উপাসনা করা হয় নিষ্পাপ, সৎ-এর। মানবজীবনের কলুষতা যাদের মধ্যে প্রবেশ করেনি তাদের দেবী রূপে আরাধনা করা হয়। ঋতুমতী হয়নি এমন কন্যাকে নতুন বস্ত্র, অলঙ্কার, মুকুট ও তিলক, আলতা, মালা পরিয়ে পুজো করা হয় দেবী জ্ঞানে। হাতে থাকে পদ্ম।
১ বছরের কুমারীকে ‘সন্ধ্যা’ নামে আরাধনা করা হয়। ২ বছর হলে কুমারী আরাধ্যা হয় ‘সরস্বতী’ নামে। ‘ত্রিধা’ বলা হয় ৩ বছর বয়সী হলে। ৪ বছর হলে কুমারী আরাধ্যা কালিকা নামে। ‘সুভগা’ নামে উপাসনা করা হয় ৫ বছর হলে। ‘উমা’ নামে কুমারীর উপাসনা হয় ৬ বছর বয়সীদের। ৭ বছর হলে কুমারী আরাধ্যা ‘মালিনী’ নামে। ‘কুব্জিকা’ নামে কুমারী উপাস্য ৮ বছর হয়ে থাকলে। ৯ বছর হলে কুমারী ‘কালসন্দর্ভা’। ‘অপরাজিতা’ নামে পুজো করা হয় ১০ বছরের কুমারীকে। ১১ বছরের কুমারী পূজিতা ‘রুদ্রাণী’ রূপে। ‘ভৈরবী’ রূপে পূজিতা হন ১২ বছরের কুমারী। ১৩ বছরের কুমারী ‘মহালক্ষ্মী’। ‘পীঠনায়িকা’ ১৪ বছরের কুমারী। ‘ক্ষেত্রজ্ঞা’ ১৫ বছরের কুমারী। ১৬ বছর বয়সী কুমারীর উপাসনা করা হয় ‘অম্বিকা’ নামে।