নিজস্ব প্রতিনিধি: জাতের নামে, ধর্মের নামে, অঞ্চলের নামে, কোথাও বা ভাষার নামে, বার বার গেরুয়া শিবিরের নেতারা দেশের একের পর এক রাজ্য ভেঙে নতুন রাজ্য গঠনের হিড়িক তুলছেন। বাংলা(Bengal) থেকে কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ(Uttar Pradesh) থেকে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্র। সর্বত্রই খালি ভাঙাভাঙির গর্জন। শুধু তাই নয়, গত প্রায় এক দশক ধরে লাগামছাড়া অত্যাচার চালানো হচ্ছে দেশের সংখ্যালঘু সমাজ ও দলিতদের ওপরে। বিভাজন আর হিংসার বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গোটা দেশে। তবে আস্তে আস্তে প্রতিবাদও গর্জে উঠছে। মানুষ বুঝতে পারছে গেরুয়া বাহিনীর হাতে দেশ আজ কতবড় বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে। তাও শুরু হয়ে গিয়েছে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার পালা। একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হচ্ছে গেরুয়া বাহিনীর। একের পর এক শরিক সরে যাচ্ছে পাশ থেকে। আর তার জেরে এবার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গিয়েছে গেরুয়া বাহিনীর মাথাদের। বিজেপির(BJP) অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা(Internal Survey) বলছে ২০১৯ সালে জেতা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ৬০টি লোকসভা কেন্দ্র(Lokshabha Kendra) এবার ২০২৪ সালে হাতছাড়া হতে চলেছে। কার্যত বিভেদের রাজনীতি, হিংসার রাজনীতি, বিভাজনের রাজনীতি এবার ব্যুমেরাং হতে চলেছে পদ্মশিবিরে।
আরও পড়ুন ‘স্বরাজ দ্বীপ, শহিদ দ্বীপ নাম নেতাজিই দিয়েছিলেন’
গত কয়েক মাস ধরেই মুখের বুলি বদলে ফেলছেন বিজেপির নেতারা। আগে যে মুখ দিয়ে নিরন্তর ঘৃণ্য ভাষণ ওগরে যেত এখন সেই মুখ দিয়েই যেন মধ্য ঝরছে। পদ্মশিবিরের সব নেতাই যে বিলি বদলে ফেলেছেন এমন নয়। এখনও ছোট-মেজ নেতারা ঘৃণ্য ভাষণ দিয়ে চলেছেন। তবে শীর্ষ নেতৃত্বের মুখে কিছুটা হলেও লাগাম পড়েছে। কিছুদিন আগেই খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা গিয়েছিল, ‘শিক্ষিত মুসলিম নাগরিকদের কাছে যান। তাঁদের বোঝান।’ আবার বাংলার বুকে মিঠুন চক্রবর্তী বলেছিলেন, ‘বিজেপি মুসলিম বিরোধী দল নয়। CAA লাগু হলে কাউকে দেশছাড়া করা হবে না। ভারতবর্ষের নাগরিক হলে কারোর ক্ষমতা নেই আপনাকে তাড়ায়। আপনাদের অহেতুক ভয় দেখানো হচ্ছে। ভারতবর্ষের কোনও সম্প্রদায়ের মানুষেরই কোনও দুশ্চিন্তা করার কারণ নেই। CAA লাগু হলেও যাঁরা ভারতবর্ষের নাগরিক তাঁরা ভারতবর্ষেই থাকবেন। কাউকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করা হবে না। সঠিক ভোটার কার্ড এবং আধারকার্ড যদি থাকে, কেউ আপনাকে তাড়াবে না। নাকে তেল দিয়ে ঘুমোন। ভুল প্রচার হচ্ছে।’ এসব শুনে অনেকেরই মনে খটকা লেগেছিল। প্রশ্ন উঠেছিল হঠাৎ হলটা কী? ভূতের মুখে হঠাৎ করে রামনাম শোনা যাচ্ছে কেন?
আরও পড়ুন ‘নেতাজি চাইতেন কৃষকেরা-তাঁতীরা আত্মনির্ভর হন’
এবার সামনে এল সেই প্রশ্নের উত্তর। বিজেপির অভ্যন্তরীণ একের পর এক সমীক্ষা এবং রিপোর্ট যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাতে কিন্তু স্পষ্ট—সংখ্যালঘু ভোট(Minority Vote Bank) নিয়ে স্বস্তিতে নেই গেরুয়া শিবির। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে যে ৩০৩টি আসন পেয়েছিল তার মধ্যে ৬০টি এমন আসন ছিল যা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। কিন্তু এবার বিজেপির সমীক্ষা বলে দিচ্ছে এই ৬০টি আসন বা লোকসভা কেন্দ্র ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির হাত থেকে বার হয়ে যেতে বসেছে। সমীক্ষায় এই ৬০টি আসনকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, এই কেন্দ্রগুলিতে কার্যত বিজেপির জয়ের কোনও আশাই নেই। এই তালিকায় যেমন আছে যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ তেমনি আছে বাংলাও। সারা দেশের মধ্যে তুলনায় সবথেকে বেশি ‘দুর্বল’ সংখ্যালঘু প্রভাবিত লোকসভা আসন চিহ্নিত করা হয়েছে এই দুই রাজ্য থেকেই। বাংলা এবং যোগীরাজ্যের ক্ষেত্রে এমন ১৩টি করে সংখ্যালঘু প্রভাবিত লোকসভা আসন চিহ্নিত করেছে বিজেপি যেখানে জেতার আর কোনও আশাই নেই। এই তালিকায় আছে বিহারের ৪টি, কেরলের ৬টি, অসমের ৬টি, মধ্যপ্রদেশের ৩টি, তেলেঙ্গানার ২টি, হরিয়ানার ২টি, মহারাষ্ট্রের ১টি, জম্মু-কাশ্মীরের ৫টি এবং লাক্ষাদ্বীপ। এরই পাশাপাশি দেশের অন্য কয়েকটি সংখ্যালঘু প্রভাবিত লোকসভা আসনও এর মধ্যে রয়েছে।
আরও পড়ুন ‘দেশের নেতা কেমন হওয়া উচিত’, জানিয়ে দিলেন মমতা
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, দিনের পর দিন যেভাবে গেরুয়া শিবির হিন্দুত্বের রাজনীতি, হিংসার রাজনীতি, বিভেদের রাজনীতি, বিভাজনের রাজনীতি, দমনপীড়নের রাজনীতি করে গিয়েছে, তারই মূল্য তাঁদের চোকাতে হবে আগামী লোকসভা নির্বাচনে। প্রথম দিকে বিজেপির কেউ এই বিষয়টি স্বীকার করতে চাইছিলেন না। কিন্তু প্রধানমন্তড়ী নরেন্দ্র মোদি বিষয়টি নিয়ে পরোক্ষভাবে মুখ খোলায় এখন প্নেকেই বিষয়টি মেনে নিচ্ছেন। গত সপ্তাহে দিল্লিতে বিজেপির দু’দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের সমাপ্তি ভাষণে মোদি সতর্ক করার পরই বিজেপির সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু মোর্চা একটি অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন করেছে। তাতে তাদের স্পষ্ট বার্তা, এই ৬০টি সংখ্যালঘু প্রভাবিত লোকসভা আসনে ব্যাপক জনসংযোগ গড়ে তুলতে না পারলে সন্তোষজনক ভোটপ্রাপ্তির কোনও সম্ভাবনাই নেই। যদিও তাতে লাভের লাভ কিছু হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।