নিজস্ব প্রতিনিধি: দোরে যখন কড়া নাড়ছে লোকসভার নির্বাচন(General Election 2024) ঠিক তখনই দেশজুড়ে গত ১১ মার্চ থেকে লাগু হয়ে গিয়েছে CAA বা Citizenship Amendment Act, 2019। আর তার পরেই সবার একটাই প্রশ্ন, তাঁরা কী নাগরিকত্ব হারিয়ে ফেলেছেন? তাঁদের কী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে হবে? সব থেকে বড় প্রশ্ন, কারার নাগরিক আর কারা নাগরিক নন, সেটা চিহ্নিত হবে কোন মাপকাঠিতে। এই প্রশ্ন শুধু বাংলায় ঘুরছে না, ঘুরছে দেশজুড়ে। এই অবস্থায় দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক(Home Ministry of India Government) কিছুটা হলেও খোলসা করেছে কারা দেশের নাগরিক আর কারা নন, সেই বিষয়ে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারির আগে যাদের অবিভক্ত ভারতে জন্ম এবং স্বাধীনতার পরেও যারা ভারতবর্ষেই থেকে গিয়েছেন, তাঁরা সকলেই ভারতের নাগরিক। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারির আগে যাদের অবিভক্ত ভারতে জন্ম এবং ওই সময়ের মধ্যে যারা পাকাপাকি ভাবে থাকার জন্য এ দেশে চলে এসেছেন, তাঁরাও এই দেশেরই নাগরিক। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যারা ভারতে জন্মেছেন, তাঁরা সকলেই ভারতের নাগরিক। ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বরের মধ্যে এ দেশে যাদের জন্ম, তাঁদের বাবা-মায়ের মধ্যে অন্তত ১ জন ভারতের নাগরিক হলেই তিনিও ভারতীয়। তবে ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বর কিংবা তার পরে যাদের এ দেশে জন্ম, তাঁদের বাবা-মা দু’জনেই ভারতীয় হলে, তিনিও এ দেশের নাগরিক হিসাবে গণ্য হবেন ঠিকই, কিন্তু বাবা-মায়ের মধ্যে অন্তত ১ জন ভারতীয় নাগরিক না হলেই সন্তানের নাগরিকত্বও প্রশ্নের মুখে পড়বে। তাই এই শেষের জনদেরই কার্যত নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে হবে। আর কাউকে কোনও আবেদন জানাতে হবে না।
একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এটাও জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো দেশ থেকে যে সমস্ত অমুসলিমরা অর্থাৎ হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সিরা ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে এ দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন এবং অন্তত ৫ বছর ভারতে কাটিয়েছেন, তাঁরা নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেতে CAA বা Citizenship Amendment Act, 2019-তে আবেদন জানাতে পারবেন। আবেদনকারীর কাছে যদি নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য প্রামাণ্য নথি না থাকে, তা হলে জেলা স্তরে থাকা যাচাই-কমিটি বাড়তি নথি জমা দিতে বলতে পারেন। কিন্তু তার পরেও আবেদনকারী নথি দিতে না পারলে, সেই আবেদন খারিজ হতে পারে। আর এখানেই উঠছে একটি প্রশ্ন। আর তা হল, যারা আবেদন জানাবেন নাগরিকত্বের জন্য, তাঁর আবেদন যদি খারিজ হয় তাহলে কী তাঁকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরে নেওয়া হবে নাকি ফের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে? সেই বিষয়টি এখনও বিজ্ঞপ্তিতে একেবারেই স্পষ্ট নয়।
একই সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষদের CAA বা Citizenship Amendment Act, 2019’র মাধ্যমে এদেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই এমন কোনও সরকারি নথি জমা দিতে হবে যেখানে তাঁর ধর্মের উল্লেখ আছে। আর এই জায়গাতেই হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সিরা আবেদনের সুযোগ পেলেও মুসলিমরা তা থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন। একই সঙ্গে যারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাবেন তাঁদের সকলকে দিতে হবে একটি হলফনামাও। তাতে আবেদনকারী যে ধর্মাবলম্বী (হিন্দু/শিখ/বৌদ্ধ/জৈন/পার্সি/খ্রিস্টান), তার প্রতিনিধিত্বকারী কোনও ধর্মীয় সংস্থার প্রধান লিখে দেবেন যে, ভারতে আসা ওই ব্যক্তি আফগানিস্তান/বাংলাদেশ/পাকিস্তান থেকে এসেছেন এবং তিনি কোন ধর্ম পালন করেন। তবে বিরোধীদের প্রশ্ন, সংবিধানে যে দেশ ধর্মনিরপেক্ষ, সেখানে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব কেন? যদিও চুপ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।