নিজস্ব প্রতিনিধি: মোদি সরকারের(Modi Government) জমানায় বার বার চোখে পড়ছে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের(Supreme Court Of India) সঙ্ঘাতের দৃশ্য। তাও এক আধটি বিষয়ে নয়, একাধিক বিষয়ে সেই সঙ্ঘাত ঘটছে প্রকাশ্যেই। কেন্দ্রের এই ধরনের আচরণ, মন্তব্য ও অভিমত যে অনভিপ্রেত তা বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা। কিন্তু তার কোনও রেশ যে মোদি সরকারের ওপর পড়ছে তা চোখেই পড়ছে না। বরঞ্চ কেন্দ্রের তরফে বার বার সুপ্রিম কোর্টের ওপর চাপ দেওয়ার বিষয়টিই বার বার সামনে আসছে। এবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে দেশের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে সহ বিচারপতির নিয়োগের জন্য কলেজিয়ামের(Collegium) বৈঠকের আলোচ্য বিষয় প্রকাশ্যে নিয়ে না আসা নিয়ে কড়া বার্তা দিল সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন আপনি কি কেষ্ট’র হাত ধরে চাকরি পেয়েছেন, পেলে সাবধান
২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর কলেজিয়ামের বৈঠকে ২জন বিচারপতির নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের পোর্টালে পরে সেই বৈঠক সম্পর্কে কোনও তথ্যই আপলোড করা হয়নি। তার জেরেই অঞ্জলি ভরদ্বাজ(Anjali Bharadwaj) নামে এক সমাজকর্মী আরটিআই(RTI) করে ওই বৈঠকের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা তাঁকে জানানো হয়নি। তার জেরেই তিনি সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু শুক্রবার সেই আর্জি খারিজ করে দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। শুধু খারিজ করে দেওয়াই নয়, এদিন কলেজিয়ামের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে আপাতত কোনও রকম আপত্তিকে প্রশ্রয় দিতে যে সুপ্রিম কোর্ট নারাজ তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন বিচারপতিতা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তকে যে দেশের আমজনতা থেকে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন সরকারকে মেনে চলতে হবে কার্যত সেটাও তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন। কেননা কোথাও গিয়ে বিচারপতিদের মনে হয়েছে অঞ্জলির মামলা কার্যত কেন্দ্রের শাসক দলের তরফেই করা হয়েছে পর্দার পিছন থেকে। তাই সুপ্রিম সিদ্ধান্ত যে মোদি সরকারকে মানতেই হবে সেটা এদিন দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ও সলিসিটর জেনারেলকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা।
আরও পড়ুন রাম ক্যালান ক্যালাবে পুলিশ, কেনা হচ্ছে ৫৫ হাজার টিয়ার গ্যাস
এদিনের রায়ে তাঁরা জানিয়েছেন, ‘কলেজিয়ামে কী আলোচনা হল তা কখনই প্রকাশ্যে আনা যাবে না। শুধুমাত্র সেই বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তই সুপ্রিম কোর্টের পোর্টালে আপলোড করা হবে।’ পাশাপাশি এদিন মোদি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতিরা জানিয়ে দেন, ‘কলেজিয়াম ব্যবস্থাকে দয়া করে বেলাইন করার চেষ্টা করবেন না। এটা দেশের আইন, তাই কলেজিয়াম সিস্টেম মানতেই হবে।’ সংসদে তৈরি আইনকে সমাজের একাংশ মানতে না-চালিয়েও বিচারপতি নিয়োগে কলেজিয়াম সিস্টেমের যে কোনও পরিবর্তন হবে না, তা-ও কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা। বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কৌল বলেন, ‘কোন আইন মানা হবে, আর কোনটা নয় তা নিয়ে যদি সবাই নিজেদের মত পোষণ করতে থাকেন, তা হলে তো গোটা ব্যবস্থাটারই ব্রেকডাউন হয়ে যাবে। সমাজের একাংশ মানতে চাইছেন না বলে কি সংসদে তৈরি আইন খারিজ হয়ে যাবে?’ যদিও সেই কথা শুনে তখন কেন্দ্রের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল দাবি করেন, অতীতে এমন অন্তত দু’টি ক্ষেত্রে এমন নজির রয়েছে যেখানে সুপ্রিম কোর্টই কলেজিয়াম প্রস্তাবিত নামে মান্যতা দেয়নি। এমন কোনও ঘটনা সম্পর্কে তাঁরা পুরোপুরি ওয়াবিহাল নয় বলে অবশ্য তখন জানিয়ে দেন বিচারপতিরা। সেই সঙ্গে তাঁরা বলেন, বিচ্ছিন্ন কোনও উদাহরণ দিয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চের সিদ্ধান্তকে সরকার এড়িয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র পেতে পারে না।