এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

চাঁচল রাজবাড়ির ঠাকুর বিসর্জনের সময় পথে আলো দেখায় মুসিলমরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, চাঁচল: রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাজবাড়ির দুর্গাপুজো নিয়ে রয়েছে হাজারও লোককথা। তার মধ্যে অন্যতম মালদার ঐতিহ্যবাহী চাঁচল রাজবাড়ি। রাজবাড়িতে অবশ্য এখন বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতর খোলা হয়েছে। তবে রাজমন্দির আগের মতোই রয়েছে। এখানে মা উমা দেবী চণ্ডী রূপে পুজিত হন। এই পুজোর মূল বিশেষত্ব হল, বিসর্জনের সময় আজও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন মায়ের যাত্রাপথে আলো দেখায়।

তখন সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ। সেই সময় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রাজ করতেন রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরি। বিহারের কিছু অংশও তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। দোর্দণ্ডপ্রতাপ হলেও প্রজাদরদী এবং ধর্মপ্রাণ হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ব ভারত জুড়ে। নিয়মিত হাতির পিঠে চেপে তিনি বেরিয়ে পড়তেন রাজত্ব দেখাশোনা করতে। গঙ্গা-মহানন্দা দু’পাড়ের উর্বরা জমির চাষ পরিদর্শন, প্রজাদের সুখ-দুঃখের খবরাখবর নেওয়া ছিল তাঁর রোজনামচা। কখনও কয়েকদিন, আবার কখনও মাসাধিককাল পেরিয়ে বাড়ি ফিরতেন। কথিত আছে, একবার তিনি যখন এভাবেই রাজত্ব দেখতে বেরিয়ে বাইরে রাত কাটাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী চণ্ডী। রাজাকে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, মহানন্দার সতীঘাটায় তাঁর চতুর্ভূজা অষ্টধাতু নির্মিত মূর্তি রয়েছে। রাজমাতাকে দিয়ে সেই মূর্তি নদী থেকে তুলে রাজাকে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে । শুরু করতে হবে দুর্গাপুজো। আদেশ পেয়ে পরদিন সকালেই সতীঘাটায় চলে যান রাজা। স্বপ্নাদেশে বর্ণিত জায়গায় নদীতে নেমে রাজমাতা তুলে আনেন দেবী চণ্ডীর মূর্তি।

দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তিটি সতীঘাটা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেন চাঁচলের রাজা রামচন্দ্র। সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো। পরবর্তীতে ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান রাজা। সেই মতো সতীঘাটায় মাটির ঘর ও খড়ের ছাউনি দিয়ে মন্দির তৈরি করা হয়। ওই বছর থেকেই শুরু হয় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। বর্তমানে এই পুজোর বয়স ৩৫০ বছরেরও বেশি। পরবর্তীতে রাজবংশের অন্যতম রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির নির্দেশে তৎকালীন ম্যানেজার সতীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সেখানে পাকা দুর্গাদালান নির্মিত হয়। ততদিনে জায়গাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে পাহাড়পুর হয়ে যায়। পাকা মন্দির নির্মাণের পর রাজা শরৎচন্দ্র দুর্গাপুজোর জন্য সেই সময় বছরে সাত হাজার টাকা বরাদ্দ করেন। সেই সময় টাকার ওই অঙ্ক নেহাত কম ছিল না।

পাহাড়পুর দুর্গাদালানের পুরোহিত অচিন্ত কুমার মিশ্র জানান, প্রতিবছর পাহাড়পুরের মন্দিরেই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ির নিত্যপূজারি ভোলানাথ পাণ্ডে জানান, প্রাচীন প্রথা মেনে এখনও সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভূজা মা চণ্ডীকে। বর্তমানে চাঁচল রাজ ট্রাস্টি বোর্ড রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ি এবং রাজাদের প্রবর্তিত বিভিন্ন পুজো, স্কুল, মন্দির সংস্কার ইত্যাদি দেখাশোনা করে। ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান সুপারভাইজার দ্বায়িত্বে রয়েছেন দেবাজয় ভট্টাচার্য। তিনি জানান, ‘এই ট্রাস্টি বোর্ডের একটি লোকাল ম্যানেজিং কমিটি রয়েছে। এই কমিটি রাজত্বের আয়ব্যয়ের হিসাব সরকারকে পাঠায়। তার ভিত্তিতে এখানে একটি বাজেট পাঠানো হয়। সেই বাজেট মেনেই এখন রাজ পরিবারের সমস্ত খরচ বহন করা হয়। বাজেটে রাজত্বের সমস্ত ব্যয়ের জন্য বছরে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজাদের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন পুজো, রাজবাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, ঠাকুরবাড়ির নিত্যপুজো।’ ওই বাজেট অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে দুর্গাপুজোর জন্য মাত্র নয় হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। তবে এই বাজারে এত কম টাকায় পুজো সম্ভব নয়। গ্রামবাসীরা আমাদের অনুমতি নিয়ে ওই পুজোয় অর্থ সাহায্য করে।

চাঁচল রাজবাড়ির পুজোর বৈশিষ্ট্যগুলি হল, কৃষ্ণা নবমী তিথিতে দুর্গাদালানে কল্পারম্ভ হয়। এবার মল মাসের জন্য একমাস আগেই সেই পুজো শুরু হয়েছে। সপ্তমীর দিন মিছিল সহকারে মা চণ্ডী ঠাকুরবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে পুজো নিতে যান। অষ্টমীতে কুমারী পুজো প্রথম থেকেই হয়ে আসছে। দশমীর পুজো শেষে পাহাড়পুর থেকে ঠাকুরবাড়ি চলে আসেন সিংহবাহিনী। সেখানেই তাঁর ভোগ রান্না হয়। কথিত আছে, একসময় সতীঘাটায়, মহানন্দার পশ্চিম পাড়ে মহামারী দেখা দিয়েছিল। তখন দেবী সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, গোধূলিলগ্নে বিসর্জনের সময় তাঁরা যেন মাকে আলো হাতে পথ দেখায়। মাকে আলো দেখানোর পর থেকেই মহামারী দূর হয়। সেই রীতি-রেওয়াজ এখনও রয়েছে। তবে লণ্ঠন, মোমবাতির পাশাপাশি এখন মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়েও অনেকে মায়ের যাত্রাপথে আলো দেখায়।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

জলপাইগুড়ির রাজবাড়িতে মা দুর্গার ভোগে দেওয়া হল পাঁচ রকমের মাছ

দশমীতে মাকে গঙ্গার উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রদক্ষিণ করিয়ে দেওয়া হয় বিসর্জন….

মহিষাদল রাজবাড়ির অষ্টমী পুজো ঘিরে চরম উদ্দীপনা

বেঙ্গালুরুতে জমজমাট বনেদি পাল বাড়ির দুর্গাপুজো

জলপাইগুড়ির রাজবাড়ির পুজোয় আজও বলি হয় পায়রা

এই বনেদি বাড়িতে মহামায়াকে সোনার অলঙ্কার পরিয়েই বিসর্জনে পাঠানো হয়

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর