নিজস্ব প্রতিনিধি, মথুরাপুর: দুগ্গা ঠাকুর কৈলাস যাত্রা করেছে তাও ৩-৪ দিন হয়ে গেল। তবে তিনি মর্ত্যে রেখে গিয়েছেন তাঁর দুই কন্নেকে। হ্যাঁ, আগামিকাল লক্ষী পুজো। আর মাস কয়েক বাদেই সরস্বতী পুজো। সে যাই হোক, মর্ত্যবাসী এখন মেতে উঠেছে লক্ষী পুজো। প্রতিটি হিন্দু ঘরে ঘরে পালিত হবে কোজাগরী লক্ষী পুজো। বাঙালিদের বাড়িতে এই পুজোর রীতি যুগ যুগ ধরে। দুর্গাপুজোর পর অমাবস্যা কাটিয়ে পূর্ণিমা তিথিতেই লক্ষী পুজো হওয়ার রেওয়াজ। এবার লক্ষীপুজোতে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের এক অপূর্ব মেলবন্ধন দেখবে রাজ্যবাসী। তবে বিষয়টি আজকের বিষয় নয়, টানা ১৬ বছরের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের সদিয়ালে রাজনৈতিক রং, জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রেখেছেন সেখানকার ‘আমরা সবাই ভাই ভাই’-ক্লাবের সদস্যরা। তাঁদের পরিচালনায় ও সদিয়াল জনকল্যাণ সমিতির সহযোগিতায় টানা ১৬ বছর ধরে এই পুজো করে যাচ্ছেন।
এবার এই পুজো ১৭ তম বর্ষে পা রাখবে সম্প্রীতির এই ‘কোজাগরী উৎসব’। কথায় আছে, ভারতবর্ষ ঐক্যবদ্ধ দেশ। যেখানে একাধিক জাতির বসবাস। কিন্তু হিন্দু মুসলমানের বিরোধ বহুদিনের। কিন্তু মথুরাপুরের এই পুজো সম্প্রীতির এক অনবদ্য মিশ্রণ। এখানে লক্ষ্মীপুজোকে ঘিরে সাতদিন ধরে চলে উৎসব। আনন্দে মাতে গোটা গ্রামের মানুষ। সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় এখানে লক্ষ্মীপ্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জায় প্রতিবছরই কিছু না কিছু চমক থাকেই। এবছরও লঙ্কা দিয়ে তাঁরা তৈরি করেছেন লক্ষী প্রতিমা। বিভিন্ন প্রজাতির হাজার খানেকেরও বেশি লঙ্কা দিয়ে তৈরি হয়েছে দেবীপ্রতিমা। সময় লেগেছে টানা দুমাস।
জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ির কামাখ্যা শীতলা মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। হোগলা দিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘লক্ষণের শক্তিশেল’। এছাড়াও এখানে বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার মর্মান্তিক দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাঁদের পরিবার পরিজনকে সমবেদনা জানাতে এহেন নিবেদন তাঁদের। প্রতি বছরই সদিয়ালের লক্ষ্মীপ্রতিমা দেখতে হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমালেও এবার উদ্যোক্তাদের ধারণা, এবার সেসব ভিড় রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে।
তাই প্রতিমা দর্শনে ব্যবস্থা করা রয়েছে ভিআইপি পাসের গেস্ট কুপনের। শুক্রবার এই পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা ও মহকুমা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন, মন্ত্রী ও বিধায়করা। সপ্তাহব্যাপী এই উৎসবে অনুষ্ঠিত হবে, যাত্রাপালা, সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান, বাউল গান ও নৃত্য-সহ বহিরাগত শিল্পীদের বিচিত্রানুষ্ঠানের।