নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রায় ৮ বছর ধরে বন্ধ দুর্গাপুজো। অর্থাভাব তো ছিলই, তারওপর উদ্যোক্তার অভাব। ২০১৩ সালেই শেষবারের মতো দুর্গাপুজো হয়েছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। এতবছর পর ফের সেই পুজো শুরুর উদ্যোগ নিলেন তৌফিক, আবদুর রহমান, মইনুলরা। ইতিমধ্যেই খুঁটিপুজো হয়ে গিয়েছে, কুমোরটুলিতে প্রতিমার বায়না দেওয়ার কাজও সম্পন্ন। তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ঠিক যেন এই কথাটাই মনে করিয়ে দেয় শহর কলকাতা। কখন ইদের অনুষ্ঠানের হিন্দুদের সমাবেশ তো কখনও দুর্গাপুজোয় মুসলিমদের প্যান্ডেল হপিং। এবছর আরও এক ধাপ এগিয়ে পুজোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা। কলকাতা পুরসভার ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত আলিমুদ্দিন স্ট্রিট প্রধানত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। হাতেগোনা কয়েকটি বাঙালি-হিন্দু পরিবারের বসবাস হলেও অবাঙালি মুসলিমদের সংখ্যাটাই বেশি। তাঁরাই দলবেঁধে কুমোরটুলি গিয়ে একচালার প্রতিমা বায়না করে এসেছেন। শুধু প্রতিমাই নয়, অর্থ জোগাড় থেকে ডেকরেটর্স, লাইটের ব্যবস্থা এমনকী পুরোহিত খোঁজা– সবটাই দায়িত্ব সহকারে করছেন স্থানীয় যুবক তৌসিফ, শাকিল, ওয়াসিমরা। ৭৪এ, এ জে সি বোস রোডের ফুটপাথের উপর তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ।
প্রধান উদ্যোক্তা মহম্মদ তৌফিক রহমান জানান, করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কোনওরকম চাঁদা তোলা হচ্ছে না। সমস্ত ব্যয়বহন করছেন নিজেরাই। তাঁদের উৎসাহ দেখে এলাকার অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। পুজোর চারদিন এখানে ভোগের ব্যবস্থা থাকছে। চারদিন আলাদা আলাদা পদ। তার মধ্যে একদিন পাড়ার সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে ভোগ খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। ভোগ রান্নার জন্য ব্রাহ্মণ নিয়ে আসা হচ্ছে। ষষ্ঠীর সন্ধিপুজো, কলাবউ স্নান, অঞ্জলি, দশমীর দিন সিদুঁর খেলা– সব আয়োজনই থাকছে। তাঁর কথায়, ‘উৎসবের কোনও রঙ হয় না। ইদ-সবেবরাতেও আমরা হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায় মিলেই হইহই করে পালন করি। এবার থেকে দুর্গাপুজোতেও করব।’
যেহেতু প্রথম বার দুর্গাপুজোর আয়োজন, তাই সমস্ত রীতি-রেওয়াজ এখনও স্পষ্ট নয় তাদের কাছে। তবে অসুবিধা বিশেষ কিছুই হচ্ছ না। এলাকার বাঙালি-হিন্দু পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ নিচ্ছেন প্রতি মুহূর্তে। সংখ্যালঘু ভাইদের এমন উদ্যোগে রীতিমতো খুশি তাঁরাও। এলাকার এক বাসিন্দা জয়ন্ত দে জানান, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম ওরা হয়তো পারবে না। কিন্তু ওদের আগ্রহ দেখে আমরাও এগিয়ে এলাম। তৌফিক, মইনুলদের উদ্যোগেই ৮ বছর পর ফের আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দুর্গাপুজো হবে। এটাই সবচেয়ে আনন্দের।’