নিজস্ব প্রতিনিধি: মহালয়া(Mahalaya)। কথায় বলে, এদিনটাই পিতৃপক্ষের শেষ, দেবীপক্ষর সূচনাকাল৷ দুর্গাপূজাকে(Durga Puja) বলা হয় কলির অশ্বমেধ যজ্ঞ৷ সেই বৃহৎ কার্য সম্পাদন যাতে সঠিক ভাবে ও নির্বিঘ্নে হয় তার জন্য পিতৃপুরুষদের(Ancestor) আশির্বাদ একান্তই কাম্য। আর সেই আশির্বাদ আসে তাঁদের জলদান বা পিণ্ডদান করে। সেই হিসাবে দুর্গাপুজোর শুরুও কিন্তু এইদিন থেকেই। পিতৃপুরুষের কাছে আমরা ঋণী, তাই তাঁদের জল নিবেদনের জন্য একটি বিশেষ ক্ষণের প্রয়োজন হয়৷ সেই বিশেষ ক্ষণটি হল মহালয়া৷ আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষ থেকে পিতৃপক্ষের সূচনা হয়। সেই কৃষ্ণপক্ষের প্রতিটি দিনই পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদান করা যায়৷। কিন্তু পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদানের প্রকৃষ্ট দিনটি হল মহালয়া৷ কেননা সেইদিনই পিতৃপুরুষরা সকলে সমাগত হন মর্ত্যের বুকে। মহালয়ার দিন ভোর থেকে গঙ্গা বা কোনও নদী কিংবা জলাশয়ে নাভি পর্যন্ত জলে দাঁড়িয়ে তর্পনকারীরা তর্পণ(Tarpan) করেন। কিন্তু জানেন কী সেদিন তর্পণকারীরা ঠিক কাকে কাকে জলদান করেন?
শাস্ত্র বলছে, তর্পনকারী প্রথমে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের উদ্দেশ্যে জলদান করেন৷ তারপর দেবতা, যক্ষ, নাগ, বিদ্যাধরদের তৃপ্তিলাভের জন্য জলদান করেন৷ এরপর জলদান করা হয় আদি মানবের উদ্দেশ্যে৷ এঁদের মধ্যে সনক, সনন্দ, সনাতন, কপিল ইত্যাদি রয়েছেন৷ এরপর হয় ঋষিতর্পণ৷ ব্রহ্মার মানসপুত্রদের তৃপ্তিলাভের জন্য জলদান করা হয়। ব্রহ্মার এই মানসপুত্রেরা হলেন – মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত, পুলহ, ক্রতু, প্রচেত, বশিষ্ঠ, ভৃগু ও নারদ। এরপর জল পান মহাভারতের মহানায়ক পিতামহ ভীষ্ম। পিতার সুখের জন্য তিনি ব্রহ্মচর্য ধারণের ভীষণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন৷ তাই তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। কোনও নারীকে স্পর্শও করেননি। সেই হেতু তাঁর কোনও পুত্র নেই৷ তিনি রাজা শান্তনুর কাছ থেকে আশির্বাদ পেয়েছিলেন, মানুষ যখনই পৃথিবীতে তর্পণ করবেন, তখন তাঁদের ভীষ্মকেও জলদান করতে হবে। নাহলে সেই তর্পণ পূর্ণ হবে না। তাই আজও তর্পণের মাধ্যমে পিতামহ ভীষ্মকে জলদান করা হয়৷ অধিকাংশ মানুষ না জেনেই এই আচার পালন করেন৷
পিতামহ ভীষ্মের তর্পণের পর আসে পিতৃতর্পণের পালা৷ পিতৃকূল ও মাতৃকূলকে জলদান করে আমরা শেষে রামানুজ লক্ষ্মণের উদ্দেশ্যে তর্পণ দান করি। লক্ষ্মণ শ্রীরামচন্দ্রের কাছে শির্বাদ পেয়েছিলেন। যেহেতু বনবাসকালে লক্ষ্মণ শ্রীরামচন্দ্র ও সীতা মায়ের সেবা করেছিলেন, তাই রামচন্দ্র তাঁকে আশির্বাদ করেছিলেন, মানুষ যখনই পৃথিবীতে তর্পণ করবেন, তখনই তাঁদের লক্ষ্মণকেও জল দিতে হবে। নাহলে সেই তর্পণ পূর্ণ হবে না। সেই কারণে তর্পণ করার সময় লক্ষ্মণকেও জল দিতে হয়। এরপর নিজ স্বর্গস্থ পিতার স্তুতি দিয়ে শেষ হয় মহালয়ার তর্পণ অনুষ্ঠান৷