নিজস্ব প্রতিনিধি: মহালয়া শুভ না অশুভ! এ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে অনেকের মধ্যে। প্রতিবছর মহালয়ার দিন এলেই শুরু হয়ে যায় তর্ক-বিতর্ক। কেউ বলে ‘শুভ মহালয়া’ বলা যায় না। তার কারণ, ওই দিন পিতৃপুরুষকে স্মরণ করা হয়, তাই প্রকৃতপক্ষে শোকের দিন। কিন্তু পিতৃপক্ষের শেষের পাশাপাশি প্রতিপদ থেকে দেবীপক্ষের সূচনাও বটে। হিন্দু শাস্ত্রে যে কোনও শুভ কাজের সূচনাতেই পিতৃপুরুষকে স্মরণ বা তর্পণ করা হয়। যে রীতি হিন্দুর নিত্য পঞ্চমহাযজ্ঞের অন্তর্গত, তাকে অশুভ বলাও বাঞ্ছনীয় নয়।
আগামী বুধবার মহালয়া। মহালয়া অর্থাৎ মহান যে আলয়। তবে আপামর বাঙালির কাছে মহালয়া মানেই বাণীকুমারের গ্রন্থ মহিষাসুরমর্দিনী, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর। ১৯৩২ সাল থেকে এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয় আকাশবাণীতে। তবে বর্তমানে আমরা ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র যে সংস্করণটি শুনতে পাই, তা ১৯৬৬ সালে রেকর্ড করা। এখন আর সরাসরি সম্প্রচার হয় না। পুরাণমতে এদিনেই পিতৃপক্ষের এক পক্ষকাল পিতৃপুরুষরা মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসে। এই সময় তাই পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পণ করে মানুষ। তর্পণ কথার অর্থ হল, যাতে অন্যের তৃপ্তি হয় সেই উদ্দেশ্যে জলদান। তাই তর্পণ শুধু পিতৃপুরুষের উদ্দেশেই নয়, সর্বভূতের উদ্দেশেই।
যেহেতু পিতৃপুরুষদের স্মরণ করার দিন, তাই মহালয়াকে শুভ মানেন না অনেকে। আবার প্রতিপদ থেকেই দেবীপক্ষের সূচনা। অর্থাৎ জ্যোতির্ময়ী জগন্মতার আগমন বার্তা ধ্বনিত হয়। দেবতাকুল তাঁদের যোগনিদ্রা থেকে জেগে ওঠেন। সেই দিনটি পালনের জন্যই চণ্ডীপাঠ। হিন্দু শাস্ত্রমতে, এই দিনেই মহিষাসুর বধের দায়িত্ব গ্রহণ করেন দেবী দুর্গা। মহিষাসুরের কবল থেকে দেবগণকে উদ্ধার করার লগ্ন যেহেতু এই সময় থেকেই শুরু হয়, তাই পরমা প্রকৃতি বিশ্বজননীর আশ্রয় হল মহান আলয়, এমত মতও পোষণ করেন অনেকে। সেক্ষেত্রে তাদের যুক্তি মহালয়া কোনওমতেই অশুভ হতে পারে না। শুভ ও অশুভের দ্বন্দ্ব বা তর্কও যদিও ব্যক্তিগত প্রেক্ষিতের ওপর নির্ভর করে। তবে ‘শুভ মহলয়া’ বলা গেলেও ‘অশুভ মহালয়া’ বলা যায় না।