নিজস্ব প্রতিনিধি: নিউ জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার রুটের সুন্দর রেলপথে চালসা স্টেশনের এক পাশে অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণী। সেখান থেকে একটু এগোলেই চাপরামারি ফরেস্টের ঘন জঙ্গল শুরু। আর তার ঠিক মাঝেই এক অনাঘ্রাত পাহাড়ি গ্রাম গৌরিগাঁও। এই করোনাকালে যারা একটু অফবিট ও নির্জন স্থান খুঁজছেন পুজোর কটা দিন শহরের জঙ্গল ছাড়িয়ে একটু প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য, তাঁদের জন্য আদর্শ গৌড়িগাঁও। এখনও খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি গৌঁড়িগাও, যতটা চালসা বা চাপরামারি জঙ্গলের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। এখানে দুটো দিন হাত-পা ছড়িয়ে আরামে কাটিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ, একটু দূরে পাহাড়ের সারি। এরই মাঝে গোটা গ্রামই যেন প্রকৃতির নিজের হাতে তৈরি।
গৌড়িগাঁও-
এই সার্কিডের নতুন আকর্ষণ রেলের নতুন চালু করা ভিস্তাডোম কোচ। এনজিপি থেকে ভিস্তাডোমে টিকিট কেটে রাখুন আগেভাগে, আর সরাসরি সকাল ৯-৩০-এ ছবির মতো সুন্দর স্টেশন “চালসা” তে নামুন। পুরো ট্রেনপথ অত্যাধুনিক ভিস্তাডোমে বসে জঙ্গল আর পাহাড় দেখতে দেখতে আসুন। গৌড়িগাঁও গ্রামকে কেন্দ্র করে দেখার অনেক কিছুই আছে। তবে এই গ্রামের গাছের ছায়ায় বসে শুয়ে-বসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিয়ে একটা দিন কাটিয়ে দিতে পারেন। সত্যি বলতে কি এখানকার হিল টপ পয়েন্ট থেকে চাপরামারি আর গোরুমারা ফরেস্টের সবুজায়ণ দেখতে দেখতে কখন সময় চলে যাবে টের পাবেন না।
গৌড়িগাঁওকে কেন্দ্র করে একদিন ঘুরে নিন স্থানীয় সেভেন পয়েন্টস। অর্থাৎ সামসিং, সুনতালেখোলা, রকি আইল্যান্ড, লালিগুরাস, ঝালং, বিন্দু আর মূর্তি। এছাড়া আর একটা দিন রাখতে পারেন রঙ্গো, চিসাং, তোদে, দলগাঁও ভিউ পয়েন্ট, প্যারেন, গোরুবাথান, পাপরখেতি, ডালিম, ফাগু, লাল ঝামেলা বস্তি সহ আরও অনেক অফবিট ও পরিচিত জায়গা। এখানে থাকার জন্য সবুজের কোলে রিসর্ট বেশ ভালো। ইন্টারনেট ঘেঁটে ওদের ওয়েবসাইট বের করে সহজেই বুকিং করতে পারেবেন। ওরাই সমস্ত সাইটসিইং-এর ব্য়বস্থা করে দেবে।
চাপরামারি-
শীতকাল জঙ্গল ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। ফলে পুজোর ছুটিতে পাহাড়ে না গিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে চাপরামারি ফরেস্ট ঘুরে আসতেই পারেন। আর ভ্রমণপিপাসু বাঙালির কাছে ডুয়ার্সের জঙ্গল আলাদাই আকর্ষণীয়। তাঁদের জন্য সেরা ঠিকানা হতে পারে চাপরামি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য়। এটি গরুমারা জাতীয় উদ্য়ানের একটি অংশ। চালসা থেকে নাগরাকাটা যাওয়ার পথে ১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কিছুটা এগোলেই দেখা মিলবে মূর্তি নদীর। তাঁরই দুই পাশে চাপরামারি ফরেস্ট। ১৮৯৫ সালেই এটি অরণ্য় হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ১৯৩৯ সালে এর নাম হয় চাপরামারি ওয়াইল্ডলাইফ রিজার্ভ। আর হালে এই ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এই জঙ্গলকে জাতীয় বন্য়প্রাণ অভয়ারণ্য়ের মর্যাদা দিয়েছে। মোট ৯৬০ হেক্টর এলাকা জুড়ে রয়েছে এই সবুজ বনভূমি।
চাপরামারিতে শীতের মরশুমে প্রচুর রংবাহারি প্রজাপতির দেখা মেলে। কপাল ভালো থাকলে দেখতে পারেন বাইসন, বাঘ, হাতিরও। তবে ময়ুর পথ চলতে গিয়ে পাওয়া যাবে প্রচুর। এছাড়া আছে বন্য শুকর, চিতা, সম্বর হরিণ। গা ছমছমে এই জঙ্গলের ওয়াচটাওয়ারে বসেই দেখা যায় বন্যপ্রাণীদের। আবার গাড়িতেও জঙ্গল সাফারি করা যায়। চাপরামারিতে এসে স্পট বুকিং করা যায়। তবে আগে থেকে যেখানে থাকবেন তাঁদের মাধ্য়মে বুকিং করিয়ে রাখা ভালো। তবে মনে রাখবেন জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর জঙ্গলে পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ বর্ষার জন্য। এখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব রিসর্ট রয়েছে জঙ্গলে থাকার জন্য। রাজ্য়ের বন দফতরের ওয়েবসাইট https://www.wbfdc.com/ গিয়ে চাপরামারি জঙ্গলে সরকারি রিসর্ট বুক করা যায়। সেখানে রয়েছে চাপরামারি ওয়াইল্ডারনেস ক্যাম্প এবং মূর্তি ট্য়ুরিস্ট লজ। আগে ভাগে বুক করতে হবে, নাহলে পুজোর সময় জায়গা পাওয়া মুশকিল। তবে প্রচুর বেসরকারি রিসর্ট ও ট্য়ুরিস্ট ক্যাম্প রয়েছে এই অঞ্চলে।
কীভাবে যাবেন…
শিয়ালদা থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরে সরাসরি আসতে পারেন এদিকে। নামতে হবে নিউ মাল জংশন। এছাড়া নিউ জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার প্য়াসেঞ্জার ট্রেন তো আছেই, সেটি দাঁড়ায় চালসা স্টেশনে। ওই ট্রেনেই ভিস্তাডোম কোচ যুক্ত করেছে রেলমন্ত্রক। এছাড়া শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করেও আসা যায় গৌড়িগাঁও বা চাপরামারি।