এই মুহূর্তে




পুজোর ভ্রমণ: বাংলার ‘অরেঞ্জ ভ্য়ালি’ সিটং ও মংপু




নিজস্ব প্রতিনিধি: আমরা প্রায় সকলেই কমলালেবু খেতে ভালোবাসি। শীতকালীন ফলগুলির মধ্যে অন্যতম এই কমলা দেখতেও চমৎকার। কিন্তু ভাবুন একবার, যদি দেখতে পান ঝাঁকে ঝাঁকে কমলা গাছে ঝুলে আছে, কোনও টা আধকাঁচা, কোনও টা আবার পাকা টসটসে। তাহলে কেমন হয়? এই রাজ্যেই আছে এমন একটি জায়গা, যেখানে গেলেই আপনি দেখতে পাবেন এই স্বর্গীয় দৃশ্য। সেই সঙ্গে নির্জন এক পাহাড়ি গ্রামের অভিজ্ঞতা একেবারে ফ্রি। তবে সেখানে যেতে হবে শীতকালেই। বিশেষ করে পুজোর মরশুমে গেলে তো একসঙ্গে রথ দেখা ও কলা বেচা হয়ে যাবে। জানেন কি, দার্জিলিংয়ের কাছেই আছে এই কমলালেবুর গ্রাম। নাম তার সিটং।

দার্জিলিংয়ের খ্যাতি নানা বিষয়ে, যার মধ্যে একটি এই কমলালেবু। আর মজার কথা দার্জিলিং-এর বিখ্যাত কমলালেবুর সিংহভাগই উৎপন্ন হয় সিটংয়ে। তাই এই পুজোর মরশুমে একবার ঘুরে আসুন উত্তরবঙ্গের এই পাহাড়ি গ্রামে। এখানে যাওয়ার সেরা সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। এই সময় সিটং-এর সমস্ত কমলালেবুর গাছই ফলে ভরে থাকে। পাহাড়ের কোলে লটকে থাকা ছোট্ট গ্রাম সিটং, যেন প্রকৃতির রঙতুলিতে আঁকা নিখুঁত একটি পর্যটন কেন্দ্র। যারা দার্জিলিংয়ের ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে একটু নির্জনতার খোঁজ করেন তাঁদের জন্য সিটং আদর্শ জায়গা হতে পারে। আর এর ঠিক পাশেই রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজরিত মংপু। তাই এই দুটি জায়গায় কয়েকটা দিন আরামে কাটিয়ে আসতে পারেন।

মূলত লেপচা সম্প্রদায়ের বাস এই এলাকায়। এখানে আসলে দেখবেন, গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে কমলা ও অর্কিডের গাছ। শীতকালে রঙবেরঙের অর্কিড তাই অন্য়তম আকর্ষণ। এই সবুজের মাঝে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে ভালোই লাগবে। পাহাড়ি পথে হাঁটলেই চোখে পড়বে স্থানীয়দের তৈরি বাঁশের সাকো বা ব্রিজ, দুই-একটি গ্রাম্য চার্চ। আর কমলালেবু গাছের বাহার। আক্ষরিক অর্থেই এই এলাকা পাহাড়ের অরেঞ্জ ভ্যালি। সিটং ঢোকার কিছুটা আগে থেকেই চোখে পড়বে কমলায় ভরা গাছ। তাতে নানান আকারের, কমলার নানান শেডের থোকা থোকা লেবু ঝুলছে। কোথাও দেখা যাবে স্থানীয়রা কমলা বাক্সবন্দি করছেন শিলিগুড়ি মার্কেটে পৌঁছে দেওয়ার জন্য়। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়বে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

সিটংয়ের উচ্চতা ৪,০০০ ফুটের কাছাকাছি। তাই ঠান্ডাও অনেকটা বেশি। এর অন্য়তম কারণ সিটংয়ের চারপাশে অনেকটা খোলা উপত্যকা। উত্তরের হিম শীতল হাওয়া হু হু করে বইছে অনবরত। তাই পুজোর পর এখানে গেলে অবশ্য়ই শীতের পোশাক নিয়ে যাবেন। এখানে বেশিরভাগই হোম স্টে। সাজানো গোছানো, কেয়ারি করা ফুল এবং অর্কিডের বাগানে ঘেরা ওই হোম স্টে গুলি। তাই দুই-তিন দিন আরাম করেই কাটিয়ে দেওয়া যায় সিটংয়ে। এমনিতেই সিটং বেশ মায়াবী, পরিবেশও বেশ নয়নাভিরাম। চারিদিকে কমলালেবুর চাষ অথবা সিঙ্কোনা। তবে কমলার বাগান দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা। আর কমলালেবুর ফলন দেখতে হলে আসতে হবে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে। কমলালেবুর ভ্যালি বলা হলেও এই চত্বরে সিঙ্কোনা চাষও বিখ্যাত। এর বাইরে বড় এলাচ সহ সব ধরনের শাকসবজি চাষ হয়। অর্থাৎ চারিদিকে সবুজের সমারোহ।

সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে সিটং পৌঁছতে সময় লেগে যাবে দুপুর। এরপর খাওয়াদাওয়া করে একটু বিশ্রাম। বিকেল বিকেল বেরিয়ে পড়ুন পায়ে হেঁটে। চারিদিকে বাহারি অর্কিড ও শীতকালীন ফুলের সমাহার। রঙিন প্রজাপতিরা উড়ে বেড়াচ্ছে। দিনের শেষে পাখির দল ঘরে ফিরতে ব্যাস্ত। বেশিরভাগ গাছেই তাঁদের কিচিরমিচির, একটা মন ভালো করা পরিবেশ। হাঁটতে হাঁটতেই পৌঁছে যান কোনও কমলালেবুর বাগানে। ঘুরে দেখুন ছুঁয়ে দেখুন গাছপাকা টুসটুসে কমলা। এমনিতেই পাহাড়ি মানুষজন খুব মিশুকে, দেখবেন কেউ কেউ আপনার হাতে তুলে দেবেন তাজা লেবু। এরমধ্য়েই শেষ বিকেলের সূর্যের আলোয় মায়াবী হয়ে উঠবে আকাশ। পাহাড়ে এমনিতেই সন্ধ্যা নামে দ্রুত, ফলে এবার ঘরে থুড়ি হোটেলে ফেরার পালা।

দ্বিতীয় দিন ভোরবেলা হাঁটাপথেই আপার সিটংয়ে একটি পাহাড়ি গুম্ফা দেখতে চলে যান। এখানে একটি ভিউ পয়েন্ট রয়েছে, যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্দান্ত ভিউ পাওয়া যায়। আরেকটা কথা বলে রাখি, সিটং হল পাখির স্বর্গরাজ্য। খুব কাছেই মহানন্দা স্যাংচুয়ারী। তাই হাতে ক্য়ামেরা সবসময় তৈরি রাখবেন, ভালো ভালো পাখির ছবিও তুলে ফেলতে পারবেন ঝটপট। এছাড়া একটি গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসা যায় কাছেপিঠের লাটপাঞ্চার, বাগোড়া এবং চটকপুর।

আগেই বলেছি, আগেই বলেছি মংপুও খুব কাছে। সেখানেও একবেলা ঘুরে আসতে পারেন। বা একরাত কাটাতে পারেন। সুন্দরী মংপুর মূল আকর্ষণ অবশ্যই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এখানেই তাঁর স্মৃতিবিজরিত বাংলোটি আজও প্রধান দ্রষ্টব্য। তবুও প্রাকৃতিক শোভাও নজরকাড়া। কারণ মংপু আজও বড্ড নিরিবিলি। নির্জনতা এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ টান মংপুর ইউএসপি। তবে এই ভ্রমণের মূল আকর্ষণ কিন্তু সেই সিটংই। পাখির কিচিরমিচির সঙ্গী করে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেই সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। হাঁটাহাঁটি করে পাহাড়ি গ্রামটির অপার সৌন্দর্য চেটেপুটে উপভোগ করতে করতে চলে আসুন পাহাড়ি দামাল নদী রিয়াং খোলায়। আর আগে সিঙ্কোনা বাগান। এই গাছের ছাল দিয়েই তৈরি হয় জীবনদায়ী ওষুধ কুইনাইন। ফলে কুইনাইন ফ্যাক্টারি দেখাও অনেকটা রথ দেখার পাশাপাশি কলা বেচার মতোই হবে।

কিভাবে যাবেন?

মূলত তিনদিক থেকে যাওয়া যায় সিটং। সবচেয়ে ছোট রাস্তাটি হল শিলিগুড়ি থেকে সেবক হয়ে ৫৫ কিলোমিটার দূরেই সিটং আসা। আপর পথটি শিলিগুড়ি থেকে সেবক, রামভি ও মংপু হয়ে এবং তৃতীয় পথটি কার্সিয়ং হয়ে। সিটং এবং মংপুতে প্রচুর হোম স্টে এবং রিসর্ট রয়েছে। ইন্টারনেট দেখে বুক করে নিতে পারেন। যদি সম্ভব হয় হোম স্টে বা রিসর্টের সঙ্গে কথা বলে গাড়ি বুক করে নিন সিটং যাওয়ার। এছাড়া নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের বাইরেও প্রচুর গাড়ি আছে। দর কষাকষি করে গাড়ি বুক করতে পারেন। কলকাতা-শিয়ালদা এবং হাওড়া থেকে উত্তরবঙ্গ এবং অসমগামী যেকোনও ট্রেনে চেপে চলে আসুন নিউ জলপাইগুড়ি। বিমানপথে বাগডোগড়া হয়েও আসতে পারেন।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

শতবর্ষ প্রাচীন কাশিমবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো সকলের আকর্ষণের কেন্দ্র

পুজোর ছুটিতে পাহাড়ে যেতে চান, আবার কম খরচে, ঠিকানা দেবে এই ‘অফবিট’গুলি

ধান্যকুড়িয়ার সাউ বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে, সরকারের দিকে তাকিয়ে বর্তমান শরিকরা

পুজোয় ঘুরে আসতে পারেন হিমাচলের এই অজানা জায়গায়

ধান্যকুড়িয়ার গাইন বাড়ির ইতিহাস জ্বলজ্বল করলেও দুর্গাপুজোর জৌলুস অনেকটাই ফিকে

পাহাড়ের গুহায় পূজিত হন লালজলের ‘দেবীদুর্গা’, রোমহর্ষক সেই উৎসবের অজানা কাহিনী

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর