নিজস্ব প্রতিনিধি: ছবি রিলিজ হয়েছে অনেকদিন, কিন্তু ছবি রিলিজের ২ মাস পর আইনি ঝামেলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে দক্ষিণী সুপারস্টার অভিনেত্রী নয়নতারার ছবি ‘অন্নপূর্ণী’ (‘Annapoorani’)। ছবিটি মুলত রান্নাকে কেন্দ্র করে নির্মিত। একজন শেফ-এর জীবনী অর্থাৎ নারী কেন্দ্রিক। ছবিতে নয়নতারার অভিনয় সবার মন ছুঁলেও ছবির কিছু দৃশ্য নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। এটি নয়নতারার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আত্মপ্রকাশকেও চিহ্নিত করে। গত ১ ডিসেম্বর OTT প্ল্যাটফর্ম Netflix-এ মুক্তি পেয়েছিল ‘অন্নপুর্ণী’। ছবির বিরুদ্ধে লাভ জিহাদ এবং হিন্দুধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করার মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আর ফিল্মে অভিনয় করার সুবাদে আইনি গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন অভিনেত্রী নয়নতারাও।
সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে ধর্মীয় অনুভূতিতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে একটি হিন্দু সংগঠন ‘অন্নপূর্ণি’র প্রযোজক, পরিচালক এবং প্রধান অভিনেতা নয়নতারার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন। এত বিতর্কের মধ্যেই ছবিটিকে OTT প্লাটফর্ম নেটফ্লিক্স থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, হিন্দু আইটি সেলের প্রতিষ্ঠাতা রমেশ শোলাঙ্কি, অভিনেত্রী নয়নতারা, জয়, লেখক-পরিচালক নীলেশ কৃষ্ণ, প্রযোজক যতীন শেঠি, আর রবীন্দ্রন, এবং পুনিত গোয়েঙ্কা, জি স্টুডিওর চিফ বিজনেস অফিসার শরিক প্যাটেল এবং নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়ার প্রধান মনিকা শেরগিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। আইনি লড়াইয়ের পরে, Netflix OTT প্ল্যাটফর্ম থেকে নয়নথারার ‘অন্নপুরানি’ সরিয়ে দিয়েছে। ছবিটির অন্যতম প্রযোজক জি স্টুডিও বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে লিখেছে যে, ছবিটি সম্পাদনা না হওয়া পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মে স্ট্রিমিং করা হবেনা।
প্রসঙ্গত, হিন্দু সেবা পরিষদের অতুল জেসওয়ানি ছবির বিরুদ্ধে বলেছেন, অন্নপূর্ণি ছবিতে এমন অনেক দৃশ্য রয়েছে, যা হিন্দু ধর্মের পূজনীয় মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রী রামকে অপমান করেছে। ছবিতে ভগবান শ্রী রামের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক মন্তব্য করে হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। লাভ জিহাদ দেখানো হয়েছে। এমনকী এটাও দেখানো হয়েছে যে, ভগবান শ্রী রাম বনবাসের সময় পশু হত্যা করতেন এবং মাংস খেতেন। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) জব্বলপুরের ওমাটি থানায় ছবির প্রযোজক-পরিচালক, এবং প্রধান অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। পুলিশ নীলেশ কৃষ্ণ (পরিচালক), নয়নতারা (শিল্পী), যতীন শেট্টি (প্রযোজক), আর রবীন্দ্রন (প্রযোজক), পুণিত গোইকা (প্রযোজক), সারিক প্যাটেল এবং মনিকা শেরগিলের বিরুদ্ধে IPC 153 এবং 34 ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
ছবির বিতর্কিত দৃশ্যগুলি হল….
১. ছবির শেষ দৃশ্যে দেখানো হয়েছিল, প্রতিযোগিতায় বিরিয়ানি বানানোর আগে মন্দিরের পুরোহিতের মেয়ে অর্থাৎ অন্নপূর্ণি হিজাব পরে নামাজ পড়ে তারপর বিরিয়ানি রান্না করেছেন।
২. অভিনেতার বন্ধু ফারহান হিন্দু পুরোহিতের মেয়ে অন্নপূর্ণির মগজ ধোলাই করে তাঁকে মাংস কাটতে উৎসাহিত করেন, এবং যুক্ত দেখান যে, ভগবান শ্রী রাম এবং মাতা সীতাও মাংস খেয়েছিলেন।
৩. ছবিতে মন্দিরে না গিয়ে রমজানে ইফতার করতে ফারহানের বাড়িতে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। ছবিতে অন্নপূর্ণির বাবা সন্ধ্যা আরতি করছেন এবং দাদি জপমালা জপ করছেন কিন্তু তার মেয়ের মাংস খাচ্ছে।
৪. অভিনেত্রীর চরিত্রের বাবা একটি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। তিনি সাত প্রজন্ম ধরে ভগবান বিষ্ণুকে নৈবেদ্য দিয়ে আসছেন, কিন্তু তাঁর মেয়ে মুরগির মাংস প্রস্তুত করছেন।
৫. হিন্দু পুরোহিতের মেয়ে একটি মুসলিম ছেলের প্রেমে পড়ে, যাকে রমজানে ইফতার করতে যেতে দেখানো হয়েছে। হিন্দু মেয়েকে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হচ্ছে এটাও দেখানো হয়েছে।
৬. ছবিতে ফারহান নামে একজন শিল্পী বলেছেন যে ভগবান শ্রী রাম, মা সীতা এবং ভগবান লক্ষ্মণ, শিব এবং ভগবান মুরুগানও প্রাণীদের হত্যা করে মাংস খেতেন।
৭. ছবিতে, ফারহান ভগবান শ্রী রামের নির্বাসনের সময় বনের প্রাণীদের হত্যা, তাদের কাটা, তাদের রান্না এবং খাওয়ার কথা বলেছেন।
৮. ফিল্মটিতে একটি ব্রাহ্মণ হিন্দু মেয়েকে মুসলিম ধর্মে প্ররোচিত করা এবং হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করে ঈশ্বরের অবমাননা দেখানো হয়েছে।