নিজস্ব প্রতিনিধি: ভিন্ন দুই মতাদর্শের মানুষ। একজন বামপন্থী। অন্যজন ডানপন্থী। পরিচয় হয়েছিল চলচ্চিত্রের হাত ধরেই। তারপর সেটে সেটে প্রেম। আর সেই প্রেম থেকেই একসঙ্গে ঘর বেঁধে কাটিয়ে দেওয়া ২৫ টা বছর। দুই ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ হয়েও কেউ কারও বাধা হয়ে ওঠেনি। চিড় ধরেনি নিজেদের সম্পর্কে। মানুষ দুটির বয়সের ফারাক প্রায় ১০ বছরের। আর একজনের জন্ম অবিভক্ত ভারতের ওপার বাংলায় (ব্রিটিশ ভারত)। আর অন্যজনের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের নবদ্বীপে। দুই তারকা শিখিয়েছিলেন ‘ভালবাসার কোনও মতাদর্শ নেই’। এককালের গুরু ও শিষ্যা হয়ে উঠেছিলেন প্রেমিক- প্রেমিকা আর তা থেকে দম্পতি।
পদ্মশ্রী জয়ী তরুণ মজুমদার (TARUN MAJUMDAR) ছিলেন বামপন্থী। আর নায়িকা সন্ধ্যা রায় (SANDHYA ROY) ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ (২০১৪- ২০১৯)। মেদিনীপুর কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ তিনি। দুজনে মিলে সমৃদ্ধ করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগৎকে। ফুলেশ্বরী, আলোর পিপাসা, এতটুকু বাসা, দাদার কীর্তি, পলাতক সহ কত ছবি স্বামীর পরিচালনায় স্ত্রীর অভিনয়। দুই জহুরী মিলে খুঁজে এনে গড়েছেন তাপস পাল, দেবশ্রী রায়, মহুয়া রায় চৌধুরীর মত কত রত্ন।
এত প্রেম তবু কাজ পাগল দুই মানুষের দেখা হত কম। পরিচালক বেশির ভাগ সময় থাকতেন চেন্নাই বা বেঙ্গালুরু। আর অভিনেত্রী থাকতেন দিল্লি বা মেদিনীপুর। তবু দূর থেকে একে অপরকে ভালবেসে যেতেন। ঝাড়গ্রাম থেকে লোকেশন দেখে ফেরার পথে অসুস্থ হয়েছিলেন পরিচালক। তারপর আইসিইউ। সেখানে স্ত্রীও ঢুকতে পারতেন না। তারপর সোমবার চির উজ্জ্বল হলেন পরিচালক।
যুবক বয়স থেকেই বামপন্থী তরুণ মজুমদার। সন্ধ্যা রায় সরাসরি রাজনীতিতে এসেছিলেন মাত্র ৮ বছর আগে। রাজনৈতিক মতাদর্শে এত অমিল তবু সম্পর্কে কত টান। ছবি পাগল দুই মানুষ আজীবন এক থাকলেন নিজেদের ভিন্ন মতাদর্শ আঁকড়ে রেখেই। সমরেশ মজুমদারের কালবেলায় ছিল, ‘ভালবাসার কোনও মতাদর্শ নেই’। গৌতম ঘোষের ছবিতে গঙ্গায় এক নৌকায় মাধবীলতার গলায় শোনা গিয়েছিল এই কথাই। বাস্তবে তরুণ মজুমদার আর সন্ধ্যা রায় দেখালেন সত্যিই ‘ভালবাসার কোনও মতাদর্শ নেই’। শুধু মতাদর্শ কেন ভালবাসায় দুই ভিন্ন জীবন ধারার মানুষকে তো ছবিতে বাঁধতে পারতেন তাঁরাই। ‘দাদার কীর্তি’ বা ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ ছবির কথা ভাবুন, দুই ভিন্ন জগতে বেড়ে ওঠা নায়ক- নায়িকাকে কী সুন্দর ও সহজ ভাবে মিলিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক। শেষ সময়ে বেডে শুয়েই পরিচালক লিখেছিলেন ‘ছবি কিন্তু হবেই…’ সোমবার চলচ্চিত্র জগৎ জুড়ে দেখা গেল ট্র্যাজিক ছবি…