নিজস্ব প্রতিনিধি: নজরকাড়া পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court) তথা সেখানকার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের(Justice Abhijeet Gangopadhyay)। আর সেই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেই বড় রায় দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই রায়ের জেরে শুধু যে মামলাকারী উপকৃত হতে চলেছেন তাই নয়, আগামী দিনে এই রাজ্যের অসংখ্য স্কুলশিক্ষক, স্কুলশিক্ষিকা(School Teachers) এবং তাঁদের সন্তানেরাও উপকৃত হতে চলেছেন। একই সঙ্গে ওই রায়ের মাধ্যমে বিচারপতি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের বদলির(Transfer) ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখারও পরামর্শও দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর সাফ বক্তব্য, নিয়ম ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু স্কুল শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের বদলির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রেখে চলতে হবে। কেননা সন্তানের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার বাবা ও মা, দু’জনকেই প্রয়োজন।
জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা সুপর্ণা রায় ২০২১ সালে স্কুল শিক্ষা দফতরে বদলির আবেদন করেন। কেননা, তাঁকে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর মহকুমার একটি স্কুলে পাঠানো হয়েছিল। অথচ যে সময় তাঁকে পাঠানো হয় তখনও তাঁর চাকরির মেয়াদ ৫ বছরও হয়নি। শুধু তাই নয়, তাঁর একটি তিন বছরের সন্তান রয়েছে। সুপর্ণার শ্বশুরবাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। তাঁর স্বামী পূর্ব রেলের শিয়ালদা ডিভিশনের ট্রেনের গার্ড। স্বামীর থেকে দূরে থাকা অসুবিধাকর না হলেও মাত্র ৩ বছরের সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে দিয়ে বা সঙ্গে নিয়ে গিয়ে কাজ করা সুপর্ণার ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক হয়ে উঠেছিল। তিন বছরের সন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় চারশো কিলোমিটার দূরে চাকরি করা তাঁর পক্ষে একরকম অসম্ভব হয়ে পড়ায় তিনি স্কুল শিক্ষা দফতরে(School Education Department) বদলির আবেদন করেন। কিন্তু স্কুল শিক্ষা দফতর পাঁচ বছর চাকরির মেয়াদ না হওয়ায় নিয়মমাফিক আবেদন গ্রাহ্য করেনি। এরপর ওই শিক্ষিকা হাইকোর্টে মামলা করেন।
সেই মামলাতেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, সন্তানের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার বাবা ও মা, দু’জনকেই প্রয়োজন। তিন বছরের সন্তান যাতে মায়ের সঙ্গে বাবার স্নেহও পায়, সে দিকে নজর অবশ্যই দিতে হবে। কর্মসূত্রে শিয়ালদা ডিভিশনের ট্রেনের গার্ডের ক্ষেত্রে নিত্যদিন বাড়ি থেকে প্রায় চারশো কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ দিনাজপুরে গিয়ে সন্তানকে দেখা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় সন্তানের কাছে বাবার জায়গা অনেকটা ভার্চুয়াল। তাই আবেদনকারী স্কুল শিক্ষিকাকে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থেকে কলকাতা বা তার আশপাশে স্কুলে চার সপ্তাহের মধ্যে বদলির বিবেচনা করতে হবে স্কুল শিক্ষা দফতরকে। আর সেটা দেখতে হবে দফতরের সচিবকে।