নিজস্ব প্রতিনিধি: মেয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। কার্যত পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। বিছানা ছেড়ে ওঠার ক্ষমতাও ছিল না। ৫ বছর আগে হারিয়েছেন স্বামীকে। আয় বলতে কিছুই ছিল না। এই অবস্থায় তিনি নিজেই মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আশেপাশে আত্মীয়রা থাকলেও কেউ সেভাবে খোঁজখবর নিতেন না। দূর এলাকার এক আত্মীয় প্রতি সপ্তাহে এসে শুকনো খাবার দিয়ে যেতেন। তাতেই কোনওরকমে দিন গুজরান হত মা-মেয়ের। কিন্তু সেই মেয়ে মারা গিয়েছেন ১০ দিনা আগে। কিন্তু তা কাউকে জানাননি মা। বরঞ্চ বাড়িতেই মেয়ের দেহ আগলে বসে ছিলেন। রবি সকালে আত্মীয় শুকনো খাবার দিতে এসে দেখলেন মেয়ের পচা গলা দেহ আগলে ঘরে বসে আছেন মা। দ্রুত তিনি পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়া শহরের শিবপুর এলাকার কাসুন্দিয়া মল্লিক পাড়ায়। একই সঙ্গে এই ঘটনা ফিরিয়ে এনেছে কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের স্মৃতিও।
জানা গিয়েছে, যিনি মারা গিয়েছেন তাঁর নাম শ্যামলী মল্লিক(৪৫)। তাঁর মায়ের নাম দীপ্তি মল্লিক(৮০)। ২০১৭ সালে মারা যান শ্যামলীদেবীর বাবা। তারপর থেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন দীপ্তিদেবীও। স্থানীয়দের দাবি, মা ও মেয়ের সম্পর্ক কোনও কালেই ভাল ছিল না। বাড়ির কোন ঘরে কে থাকত, তা নিজেরাই জানতেন না তাঁরা। ঘর থেকে খুবই কম বাইরে বেরোতে দেখা যেত তাঁদের। নিজেরা রান্নাবান্নাও করতেন না। পাড়ার লোক খাবার দিয়ে যেত। আর আসতেন দীপ্তিদেবীর ভাইয়ের ছেলে শুভজিৎ পাল। তিনি প্রতি সপ্তাহে এসে দুইজনকে কিছু শুকনো খাবার দিয়ে যেতেন। বাড়ির আশপাশে কয়েকজন আত্মীয় থাকলেও তাঁদের খবর কেউ নিত না। গত সপ্তাহে আসতে পারেননি শুভজিতবাবু। রবি সকালে খাবার দিতে এসে ঘর থেকে পচা গন্ধ পান তিনি। শ্যামলীর ঘরে ঢুকতেই তাঁর দেহ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। সেই দেহ ততক্ষনে পচে গলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
দ্রুত এরপর বিষয়টি পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও পুলিশকে জানান শুভজিৎ। দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে। সব থেকে বড় বিষয় এদিন শ্যামলীর মৃত্যুর বিষয়ে দীপ্তিদেবীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, মেয়ে কোথায় তিনি কিছুই জানেন না। এমনকী মেয়ের মৃত্যুর খবরও তাঁর অজানা। পুলিশ শ্যামলীর দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্যও পাঠিয়েছে। কেননা ঠিক কী কারণে ও কীভাবে শ্যামলী মারা গিয়েছে সেটাই জানতে চাইছে পুলিশ। একইসঙ্গে দীপ্তিদেবীকেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। স্বাভাবিকভাবে এই ঘটনায় শিবপুর সহ গোটা হাওড়া শহরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।