নিজস্ব প্রতিনিধি: লড়াই শেষে কিস্তিমাত রাজ্যের। যাদবপুর হাতছাড়া রাজভবনের। রাজ্যপালের সেনাপতি এখন শাসক শিবিরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মঞ্চে অপসারিত অস্থায়ী উপাচার্য। পরতে পরতে চমক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মঞ্চ। চমক রাজ্য রাজনীতিতেও। প্রতি বছরের ২৪ ডিসেম্বর যাদবপুরে সমাবর্তন হয়। এবারেও হচ্ছে। যদিও তা ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন রাজভবনের বাসিন্দা। কিন্তু ঠেকাতে পারলেন না। বরঞ্চ তাঁর হাতে থাকা দাবার ঘুঁটি চলে গেল শাসকের হাতে। কেননা এতদিন ধরে যাকে ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল, রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছিল, তিনি শেষ মুহুর্তে হলেও বুঝতে পেরেছেন যে এই রাজনীতির নোংরা খেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন ও পড়ুয়ারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই তিনিও যাবতীয় জড়তা কাটিয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে উঠে দাঁড়িয়েছেন। রাজ্যের অনুরোধে তাই তিনিই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের(Jadavpur University) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে(Convocation Programme) পৌরহিত্যও করছেন। নজরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অপসারিত অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ(Budhadev Shaw)।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি মেনে সমাবর্তনের জন্য প্রতি বছর কোর্টের বৈঠক করতে হয়। তার জন্য প্রয়োজন হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপালের অনুমতি। কিন্তু এ বছর আইনি জটিলতার কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের বৈঠকে অনুমতি দেননি আচার্য তথা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস(C V Anand Bose)। তার পরেই সমাবর্তন হবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। যদিও নির্ধারিত দিনেই সমাবর্তনের কথা জানিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় রাজ্য শিক্ষা দফতরও। এর মাঝেই রাজভবনের তরফে গতকাল সন্ধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে অপসারণ করা হয়। রাজ্য সরকার কিন্তু মুহুর্ত দেরী করেনি। বুদ্ধদেবের অপসারণ বেআইনি বলে দাবি করে তাঁকে পদে পুনর্বহাল করার কথা জানিয়ে দেয় রাজ্যের শিক্ষা দফতর। শুধু তাই নয়, রাতেই ট্যুইট করে রাজ্যপালকে তোপ দাগেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। লেখেন, ‘দেখেশুনে মনে হচ্ছে, উনি রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে নেমেছেন। যে কারণে উনি শুধু নির্বাচিত রাজ্য সরকারের পরামর্শ মানছেন না তাই নয়, সর্বোচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তী রায়কেও অশ্রদ্ধা করছেন। তাঁর দাঁত, নখ বেরিয়ে গিয়েছে।’
ব্রাত্যের(Bratya Basu) অভিযোগ মূলত দু’টি। এক, রাজ্যপাল নির্বাচিত রাজ্য সরকারের পরামর্শকে ‘উপেক্ষা’ করেছেন। দুই, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আপাতত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট যে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছিল, উপাচার্যকে সরিয়ে দিয়ে তা লঙ্ঘন করেছেন। এরপরেই রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, যাদবপুরের উপাচার্য পদে বহাল থাকছেন বুদ্ধদেব সাউই। রাজভবন যে বিবৃতি দিয়েছে সেটা আইনবিরুদ্ধ, এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থী। সূত্রের খবর, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি হাতে পাওয়ার পরই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সমাবর্তন করানোর সিদ্ধান্ত নেন উপাচার্য। সূত্রের খবর বুদ্ধের রাজভবন বিরোধী বিদ্রোহের পরে পরেই রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় রবি সকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যেহেতু রাজ্যপাল আসছেন না তাই তাঁকেই পৌরহিত্য করতে হবে।
গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বুদ্ধদেব। জানিয়েছেন, ‘সমাবর্তনের জন্য অনেক দিন ধরে প্রস্তুতি চলছে। উনি কবে বারণ করেছেন? দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করান। আমি চাই তদন্ত হোক। সিবিআই তদন্ত হোক। কে দুর্নীতি করেছে দেখুন! কিন্তু পড়ুয়াদের কেন ডিগ্রি দেওয়া হবে না? আড়াই হাজার পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে লড়েছি। আমার ওপর ওর কেন রাগ, বুঝতে পারছি না। ওর এই পদক্ষেপ আমার কাছে প্রত্যাশিত ছিল। এ তো আর কোভিড পরিস্থিতি নয়। সমাবর্তন না করলে ছাত্ররা ডিগ্রি পাবে না। আমি কোনও অপরাধ করেছি বলে তো মনে হচ্ছে না। আমি তো আমার মনুষ্যত্ব খুইয়ে তো কিছু করব না। আমি তো আইন মেনে কাজ করব। সরিয়ে দেওয়ার ভয়ে তো আমি আর আইন অমান্য করব না। আমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে পড়ুয়াদের রক্ষা হলে করুক। দুই সরকার, আদালত সবাইকেই পড়ুয়াদের কথা ভাবতে হবে।’